ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তিন নির্বাচন কমিশনার ডিসিসির আওতাভুক্ত সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নকে নির্বাচনী এলাকার বাইরে রেখে নির্বাচন করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তবে সরকার বিদ্যমান অবস্থাতেই নির্বাচন করার পক্ষে।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকে কমিশনাররা ওই মত দেন। তবে বিকেলে কমিশন সচিবালয় থেকে কমিশনের আজকের বৈঠকের যে কার্যপত্র তৈরি করা হয়েছে, তাতে আগামী ৩ ও ৬ জুলাইয়ের যেকোনো দিন ঢাকার দুই সিটি ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে জানান, ডিসিসির নির্বাচন হবে কি হবে না—সে বিষয়ে আজ কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, ঢাকা সিটির বিষয়টি অনিশ্চিত হলেও নবগঠিত গাজীপুর সিটি ও জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি অনেকাংশেই নিশ্চিত। আইন অনুযায়ী, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন করতে হবে। আর সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জ আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল কমিশনের বৈঠক হয়। এতে তিন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ডিসিসির সুলতানগঞ্জ এলাকাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত ১ জানুয়ারি তেজগাঁও সার্কেলের সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের ১৩টি এলাকাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির অন্তর্ভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকার সীমানা বিন্যাস এবং ওয়ার্ডের নম্বর দেওয়া হয়নি। বৈঠকে কমিশনাররা সীমানা বিন্যাস শেষ না হওয়ায় এ সময় নির্বাচন করাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিমত দেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন মনে করে, এ অবস্থায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে মামলা-মোকদ্দমা হতে পারে। এতে আবারও ডিসিসি নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে। বিষয়টি কমিশনের জন্য বিব্রতকর হবে। এর আগে একবার তফসিল ঘোষণা করেও নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ১৩ মে ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর কমিশন সচিবালয় সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের বিষয়টি স্পষ্ট করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। এর জবাবে ১৯ মে মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের এলাকাকে দক্ষিণ সিটির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও এটি এখনো ওয়ার্ডভুক্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নকে বাদ রেখে দক্ষিণ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ করেছে।
কিন্তু কমিশন মনে করে, সুলতানগঞ্জকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টি আইনের পরিপন্থী। সিটি করপোরেশন আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সিটি করপোরেশন-সংলগ্ন কোনো এলাকাকে করপোরেশনের সীমানার অন্তর্ভুক্ত অথবা বহির্ভূত করতে পারবে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, ‘কোনো এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। সুলতানগঞ্জকে সিটির আওতাভুক্ত করা হলেও এর সীমানা বিন্যাস প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। সে জন্যই এই এলাকাকে বাদ রেখে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে। এতে আইনগত কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। তাঁর প্রশ্ন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু উত্তর সিটির নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের বক্তব্যের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘পেশীশক্তির দৌরাত্ম যাতে না থাকে, সে জন্য আমরা ঢাকার দুই সিটিতে একই দিনে নির্বাচন করতে চাই।’