রাজশাহীতে লিটন বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত – নূর হোসেন পিপুল
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (লিটন) বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ১৩৮ কেন্দ্রে তিনি মোট ভোট পেয়েছেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৩১২ ভোট। বুলবুলের চেয়ে ৮৭ হাজার ২০ ভোট বেশি পেয়েছেন লিটন।
এর আগে সোমবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। লাগাতার ৮ ঘণ্টা ভোটগ্রহণকালীন বিভিন্ন কেন্দ্রে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজশাহীর ৩০নং ওয়ার্ডের বিনোদপুরের ইসলামীয়া কলেজ কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
আরো পড়ুন : সিটি নির্বাচন নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের
বাসস
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে আগে আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতেই বিএনপি তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি। তারা জাতীয় নির্বাচনে আন্দোলনের ইস্যু তৈরি, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং বিদেশীদের কাছে নালিশ করে দেশকে অপদস্ত করতেই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিল।’
সেতুমন্ত্রী কাদের আরো বলেন, নির্বাচনকে বিতর্কিত করে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করার যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের আজ বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগের জবাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আজ সোমবার রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এ তিন সিটিতে এই প্রথম বারের মতো দলীয়ভাবে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রাশিদুল আলম, মুকুল বোস, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা থেকে শুরু করে আজ ভোট গ্রহনের দিন পর্যন্ত বিএনপি নেতারা তাদের স্বভাব অনুযায়ী মিথ্যাচারের মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করে জাতীয় নির্বাচনে ইস্যু তৈরি করার ষড়যন্ত্র করেছিল।
নির্বাচনকে বিতর্কিত করাই ছিল বিএনপির টার্গেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে না চেয়ে নির্বাচনকে ভেস্তে দিতে মাঠে নামে তাহলে কারো কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থী নিজের ভোট না দিয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে দিনভর নাটক করেছেন। বরিশালেও বিএনপির প্রার্থী নিজের ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
কাদের বলেন, বিএনপির নেতারা তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে যে সকল অভিযোগ করেছেন তা আগে থেকেই তারা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তারা নির্বাচনের দিন সকালে, দুপুরে এবং বিকেলে কি বলবেন তা আগেই লিখে রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফশিল থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার কোথাও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোন ধরনের হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি। এতে নির্বাচন যে শান্তিপূর্ণ হয়নি তাও বলার কোন সুযোগ নেই।
সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) প্রাপ্ত ফলাফলে আমরা যে ট্রেন্ড (প্রবনতা) দেখেছি তাতে আমরা তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবদী। এ ফলাফলে আমরা বরিশাল ও রাজশাহীতে এগিয়ে রয়েছি। সিলেটে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে আমাদের প্রার্থী পিছিয়ে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবে। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জনের পক্ষেই রায় দেবে।’
অবস্থানরত অবস্থায় তিনি বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হেয়েছে। নগরীর মোট ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ১০০টি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। এ পরিস্থিতির প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার অবস্থান থেকে সরবেন না।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পঞ্চম নির্বাচন এটি। এ নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২১৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মেয়র পদে রয়েছেন ৫ জন, সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডের বিপরীতে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৫০ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৫২ নারী।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (লিটন), বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মো. শফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র ১৩৮টি। এসব ভোট কেন্দ্রে বুথ (ভোটকক্ষ) রয়েছে ১ হাজার ২০টি।