চলতি সপ্তাহেই নিষ্পত্তি হচ্ছে সাঈদীর আপিল

0
92
Print Friendly, PDF & Email

জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলা চলতি সপ্তাহে শেষ হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের বিধান অনুযায়ী তাত্ক্ষণিকভাবে আপিল খারিজ করে দিলে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে। আর আসামিপক্ষের আপিল খারিজ করে না দিয়ে রায় ঘোষণার জন্য একটি দিন ধার্য করতে পারে আপিল বিভাগ। এই দুটি পদ্ধতির কোনটি গ্রহণ করবে তা চলতি সপ্তাহেই জানা যাবে। আসামিপক্ষের আপিল খারিজ করে দিলেও পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করতে কিছু দিন সময় লাগতে পারে। এর আগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের শুনানি শেষ হয় গত বছরের ১ আগস্ট; কিন্তু রায় দেয়া হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। আর পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়া হয় আরও অনেক পরে ৫ ডিসেম্বর। পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত কাদের মোল্লা রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে পারেনি। রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষে ১২ ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এবারও জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে পারে আপিল বিভাগ। সেক্ষেত্রে আপিলের রায় ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগ পর্যন্ত ঝুলে থাকবে সাঈদীর মামলাটি। সাঈদী রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রিভিউ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাঈদীর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, আপিলের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই মামলাটির রায় চলে আসতে পারে। তিনি বলেন, সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করছি। কারণ ইতিমধ্যে আমরা অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাজাহান বলেছেন, সরকারপক্ষের যুক্তিতর্কের পর আমরা পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করব। এরপর রায় দেয়ার জন্য আপিল বিভাগ একটা তারিখ নির্ধারণ করবে বলে আশা করছি।
এ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে সাঈদীর আপিল মামলার ৩৬ কার্য দিবস শুনানি হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর বিরুদ্ধে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ২০টি অভিযোগের মধ্যে এই দুটিসহ ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। আসামিপক্ষ মামলায় খালাস চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। আর রাষ্ট্রপক্ষ খালাস পাওয়া অভিযোগগুলোয় সাজা চেয়ে আপিল দায়ের করে। এই দুটি আপিলের ওপরেই শুনানি এক সঙ্গে চলতে থাকে।
যে দুটি অভিযোগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল: সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালের ৮ মে বেলা ৩টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তার সাঙ্গোপাঙ্গরা পাকবাহিনীর সহায়তায় সদর থানার চিথলিয়া গ্রামের মানিক পসারীর বাড়িতে হানা দিয়ে তার ভাই মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহিম কুট্টিসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে পাঁচটি বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পাকসেনা ক্যাম্পে ফেরার পথে সাঈদীর প্ররোচণায় ইব্রাহিমকে হত্যা করে লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়া হয়। মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে সাঈদী ও অন্যদের আগুনে পারেরহাট বন্দরে হিন্দু সমপ্রদায়ের বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাঈদী সরাসরি অপহরণ, খুন, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন। অভিযোগ-১০ : একইদিন সকাল ১০টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগিরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। যার মধ্যে চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল মণ্ডল, বিসাবালি, সুকাবালি, সতিশবালার ঘর রয়েছে। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসাবালীকে নারিকেলগাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। বেসামরিক মানুষের বসবাসের বাড়িতে আগুন দেয়া নিপীড়নের শামিল। সাঈদী বাড়িঘর পোড়ানো, বিসাবালিকে হত্যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ দুটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে। দুটি অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় বাকি ছয়টি অভিযোগে তাকে কোনো সাজা দেয়নি ট্রাইব্যুনাল-১।

শেয়ার করুন