এরশাদের অবস্থান আরো দুর্বল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

0
135
Print Friendly, PDF & Email

১৯৮৬ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল জাতীয় পার্টির।এরশাদের নানামুখী বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আর সিদ্ধান্তহীনতায় ইতোমধ্যেই দলটিকে চার দফা ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হয়েছে। সর্বশেষ গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এরশাদের সরাসরি ইউ-টার্ন আওয়ামী লীগকে মাহাবিপাকে ফেলে দিয়েছিল।শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তার পর জোড়াতালি দিয়ে হলেও এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়েই একটা নির্বাচন সম্পন্ন করা গেছে ।৯০’র গণঅভ্যুত্থানের পর মূলত এরশাদের এই জাতীয় পার্টি তাঁর স্বাধীন দলের চরিত্র হারিয়ে ফেলে।
এই দলটি কখনো বিএনপি আবার কখনো আওয়ামী লীগের দিকে হেলে পড়ে ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টিতে এরশাদের অবস্থান আরো দুর্বল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।আর এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে তাঁর স্থলে বাসানো হয়েছে জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুকে।জাতীয় পার্টির গত প্রেসিডিয়ামের সভায় জিয়াউদ্দিন বাবলু সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন থেকে জাতীয় পার্টি একক সিদ্ধান্তে নয় চলবে যৌথ সিন্তান্তে ।তিনি এও বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সবকিছু নির্ধারিত হবে।কিউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে দলের চেয়ারম্যানও।
রাজনৈতিক বিশ্লেকরা বলছেন, বাবলুকে মহাসচিব করার মধ্যদিয়ে জাপা আরো একধাপ আওয়ামীকরণের দিকে এগিয়ে গেছে। এখন এরশাদকে বাদ দিয়ে দলের ভার রওশন এরশাদের হাতে তুলে দিলেই বাজিমাত।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, দলের মধ্যে আওয়ামী গ্রুপটি আর এরশাদকে বিশ্বাস করতে পারছে না। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এরশাদের টালবাহানা এ গ্রুপটিকে বিপদে ফেলেছিল। এজন্য এরশাদের ওপর মোটেও আস্থা রাখতে চাচ্ছে না গ্রুপটি।
কিন্তু দলের সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদের অনুগত হওয়ায় আওয়ামী গ্রুপটি মোটেও সুবিধা করতে পারছিল না। এজন্য হাওলাদারকে কৌশলে এরশাদের মা্ধ্যমে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জাপার আওয়ামী গ্রুপটি এখন জাপার চালকের আসনে।
বাবলুপন্থিরা এখন জাপায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এ গ্রুপের নেতারা মনে করছে, যেকোনো সময় দলের চেয়ারম্যান এরশাদ তার ভোল পাল্টাতে পারেন। এতে দলের ক্ষতি হবে। এজন্য এরশাদকে ক্ষমতাহীন করতে তারা মরিয়া হয়ে কাজ করছে বলে জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে।এরশাদ যে এগুলো বুঝতে পারছেন না তা নয়। এসব দেখে শুনে এরশাদ মাঝখানে পদত্যাগ করতেও চেয়েছিলেন।
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এরশাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দোলাচল ভূমিকা নিয়ে দলের একাংশ খুবই নাখোশ ছিল। এন্টি এরশাদ এই গ্রুপটি চাচ্ছিল দলে এরশাদের ক্ষমতা খর্ব হোক যাতে আওয়ামী বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত জাপার পক্ষ থেকে না আসে।
জাপার এন্টি এরশাদ গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান জাপা মূলত আওয়ামী লীগের হাত ধরেই শক্তিশালী হতে চায়। এজন্য তারা রওশন এরশাদের হাতে জাপার মূল ক্ষমতা দেখতে চায়। জিয়া উদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব করার ফলে জাপায় আওয়ামীকরণ প্রক্রিয়া আরো একধাপ এগিয়ে যায়।
এদিকে সেনা কর্মকর্তা মঞ্জু হত্যা মামলায় এরশাদের প্রধান আসামি হওয়ার কারণে এরশাদ নিজ দলে দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছেন। জাপার একাংশের নেতারা বলছেন, যদি এরশাদ মঞ্জু হত্যা মামলায় ফেঁসে যান তাহলে রওশন এরশাদের হাতেই দলের ক্ষমতা তুলে দেয়া যুক্তিযুক্ত।
সম্প্রতি জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদদের নিয়ে এক বৈঠকে দলের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দলের চেয়ারম্যান এরশাদের সভাপতিত্বেই বৈঠকটি হয়। জাপার আওয়ামী ঘেঁষা ওই গ্রুপটি মূলত চাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে থেকেই দলকে গুছিয়ে নিতে।
এ ব্যাপারে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দলের অবস্থা নড়বড়ে তার প্রমাণ মিলেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শেষে হওয়া ৫ দফা উপজেলা নির্বাচনে ৪৫৫টি চেয়ারম্যান পদের মধ্যে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র তিনটি। একই দশা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও। ৯১০টি পদে জাপা পেয়েছে মাত্র ১৬টি।
রওশন এরশাদের একান্ত সচিব গোলাম মসিহ বলেন, জাপা মূলত আওয়ামী ও বিএনপির দেখানো পথে পা বাড়িয়ে এখন জিরো হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারে নতুন কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করেই আগাতে হবে।
তবে জাতীয় পার্টি তার হারানো ইমেজ ফিরে পেতে জনপ্রিয় ইস্যুতে সরকারের বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করেছে বলে জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিসভায় বর্তমানে জাপার তিন জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
জাপা সূত্র বলছে, দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করতে জেলা পর্যঅয়ে যেসব জনপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির দিকে ঝুঁকছে তাদের সঙ্গে কেন্দ্র থেকে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন