দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগমী ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনে কোনো অবস্থায় মহাজোটকে খালি মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে জোটের একটি নির্ভরশীল সূত্র।
ইতিমধ্যে রোববার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য তাফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তাফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১০২টি উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র মতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবারের সমাবেশে ১৮ দলীয় প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। আর এই সমাবেশ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া ও বিভিন্ন জেলায় গণসমাবেশের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করছে ১৮ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর এসব জেলার গণসমাবেশে স্বয়ং খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখবেন।
এমনকি খালেদা জিয়া গত ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন আন্দোলনকে বেগবান করতে পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করবেন তিনি। খালেদার এমন বক্তব্যে তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর ২২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর নবম জাতীয় নির্বাচনে ১৮ দলের ভরাডুবি হওয়ার পর সারাদেশের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের অধিকাংশ নেতারাই জয় লাভ করে। এছাড়াও গত ৫টি সিটি করপোরেশেন নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থীদের পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে নেয় ১৮ দল। এর সুবাধে ১৮ দলের বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, শিগগিরই জোটনেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে মাঠ নেতাদের কাছে নির্দেশনা পাঠাবেন। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও কৌশলে ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হতে চায় জোট।
সূত্র আরো জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপজেলা নির্বাচনকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি সমন্বয় করতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের যুগ্ম-মহাসচিব, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।
নির্বাচনের বিষয়ে অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিভিন্নভাবে সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে। অনেকে কারাগারে রয়েছে। যদিও বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তারপরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি। এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের আগ্রহ রয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বাংলামেইলকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করবে।’
উপদেষ্টা পরিষদের আরেকজন সদস্য ড. এম ওসমান ফারুক বাংলামেইলকে বলেন, ‘এখনো নীতিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া এখনো সময় আসেনি। সময়মতো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এটা নীতি নির্ধারণী ফোরামের বিষয়। আলোচনা করে দলীয় সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর বিএনপির এক সহ-সভাপতি ও ১৮ জোটের অন্যতম নেতা বাংলামেইলকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো ধরনের ঘোষণা আসেনি। তবে তাফসিল ঘোষণা হয়েছে। দেখা যাক সোমবার ম্যাডাম গণসমাবেশে কী নির্দেশ দেন। ম্যাডাম যে নির্দেশ দেবেন সে অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেভাবে মহাজোট পরাজিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই পরাজিত হবে।’
দলের একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি যে কৌশল নিয়েছিল এবারো একই পথে হাঁটবে।’
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় পাঁচশ উপজেলা পরিষদের মধ্যে ১০২টিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এ নির্বাচন হচ্ছে।
রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৫ জানুয়ারি, বাছাই ২৭ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ ফেব্রুয়ারি।