সংশোধনের নামে সরকারি অর্থের অপচয়

0
194
Print Friendly, PDF & Email

ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(৩০ডিসেম্বর):বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগ। সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ প্রকল্প গ্রহণ করছে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় অর্থের চেয়ে অনেক কম বাজেট দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এসব প্রকল্পের অনুমোদন নেয়া হচ্ছে। ফলে অনুমোদনের এক বছর না ঘুরতেই আবার সংশোধনের জন্য পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে সংশোধনের জন্য প্রায় ১০০টি প্রকল্প রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। এসব প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন করা হলে বাস্তবায়নের ব্যয়ভার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গছে।
পরিকল্পনা কমিশনের হিসাবে, ঠিক সময়ে কাজ না হওয়ায় গড়ে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত সময় বেশি লাগছে প্রতিটি প্রকল্পে। এর ফলে সরকারি তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে। ওই অর্থ বছরে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এডিপি আওতায় নেয়া প্রকল্পসমূহে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। গত ২০১০১১ অর্থবছরে সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর গড় পরিকল্পিত বাস্তবায়নকাল ছিল সাড়ে বছর। এর বিপরীতে প্রকৃত গড় বাস্তবায়নকাল দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৪ বছর। হিসাবে প্রতিটি প্রকল্পের গড় বাস্তবায়নকাল দশমিক ৯২ বছর বেশি। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৩ থেকে ১৪ বছর, আর ব্যয় বেড়েছে ১২ হতে ১৩ গুণ।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন নেয়া পরবর্তীতে সংশোধনের নামে অর্থের অপচয়ের বিষয়টি সরকারের শীর্ষ মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। অবস্থায় প্রকল্প অনুমোদনে নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে সরকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি বিষয়ে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প তৈরি থেকে শুরু করে অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে। নতুন নীতিমালায় প্রকল্প সংশোধনে নিরুত্সাহিত করা হবে। প্রকল্প দলিলে ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ উল্লেখ করা হবে তার মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে সর্বোচ্চ কোনো কোনো ক্ষেত্রে থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা যাবে। ধরনের আরও কিছু বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদনে সংশোধন আনা হচ্ছে। বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কমিটি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে।
কমিটি বিনিয়োগ প্রকল্প, বিনিয়োগ প্রকল্প সংশোধন, বিনিয়োগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি, সরকারি খাতের কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির জন্য প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প, নিজস্ব তহবিলে বাস্তবায়িত প্রকল্প সংশোধনসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে।
জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় বিনিয়োগ প্রকল্পের অর্থায়নে বৈদেশিক সহায়তার সংশ্লেষ থাকলে তাও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিদ্যমান স্বল্প, মধ্য দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় নীতি পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপর বিবেচনা করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগের নীতি বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নির্বাচন করবে। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় তৈরি বাজেট চলতি বছরসহ পরবর্তী বছরে দেয়া সম্পদের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। একই উদ্দেশ্যে কিংবা একই ধরনের একাধিক ক্ষুদ্র প্রকল্প আলাদাভাবে তৈরি না করে একটি মাত্র প্রকল্প তৈরি করতে হবে। কারিগরিভাবে জটিল প্রকৃতি ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের সময় সম্ভাব্যতা যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।
বিনিয়োগ প্রকল্পে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কার্যক্রমের সঙ্গে রাজস্ব বাজেটের আওতাভুক্ত কর্মসূচি কিংবা অন্যান্য প্রকল্পের কার্যক্রমের দ্বৈততা পরিহার করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকা েধরনের ঝুঁকি আসতে পারে সে ব্যাপারে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে। জমি অধিগ্রহণের জন্য অগ্রিম পরিকল্পনা করতে হবে। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রতিবেশ, কর্মসংস্থান, জেন্ডার ইস্যু, দারিদ্র্য কমানো, উত্পাদনশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাবগুলো উল্লেখ করে প্রকল্প দলিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জানা গেছে, পুনর্বাসন প্রকল্পের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ মেরামতের জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে পাওয়া অর্থ তার ব্যবহার ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে। সড়ক পরিবহন খাতে উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি প্রক্রিয়াকরণের সময় বিভিন্ন তথ্যাবলীর ভিত্তিতে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে হবে। ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সেতুর জন্য হাইড্রোলজিক্যাল সমীক্ষার সুপারিশ সংযুক্ত করতে হবে। যেসব প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন, এসব প্রকল্প তৈরি করার সময় ভূমির পরিমাণ, মালিকানা, ভৌগোলিক অবস্থা, সমকালীন বাজার দর ইত্যাদি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করে তা প্রকল্পের ছকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জরিপ কিংবা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোটি টাকা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অনুমোদন দেবে। সংশোধন প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ একবার করা যাবে। এছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিলে উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ অনুমোদন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। নিজস্ব তহবিলে প্রকল্পের সংশোধন নিরুত্সাহিত করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্প সংশোধনের চাপে নতুন প্রকল্প অনুমোদন কমে গেছে। গত অর্থবছর একনেকের সর্বশেষ বৈঠকে পাঁচটি প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকে একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা অধিকাংশ প্রকল্পই সংশোধনীমূলক

 

 

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন