রুপসীবাংলা, চট্টগ্রাম (২৩ নভেম্বর) : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, `আপনারা অসময়ে সরব, সময়ে নীরব। অসত্য তথ্য দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করলে আপনারা কৈফিয়ত দিতে বাধ্য। কেউ কৈফিয়তের উর্দ্ধে নয়।`
সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ার চৌধুরীর স্মরণে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
বর্তমান সংসদের ৯৭ শতাংশ সাংসদ নেতিবাচক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য দিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে টিআইবি। সম্প্রতি সংসদেও টিআইবি`র সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন মন্ত্রী-সাংসদরা।
ওই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, `টিআইবিকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করি, যারা এমপি, রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি নিয়ে এত কথা বলেন, এক-এগারোর পর যারা এসেছিল তারা কি স্বর্গের দূত ছিল, তারা কোন দুর্নীতি করেনি ? সেসময় টাকা খেয়ে কারও বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছিল, আবার কারও মামলা তুলে নেয়া হয়েছিল। এসব কি টিআইবি জানত না ?`
মন্ত্রী বলেন, `টিআইবির প্রতিবেদন যখন আমরা তাত্ত্বিকভাবে নয়, দালিলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করার উদ্যোগ নিয়েছি, এখন শুনছি বিভিন্ন কথাবার্তা। কেউ কেউ বলছেন, এমপিদের বিচলিত হলে চলবে না, সহিঞ্চু হতে হবে। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগেও জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য তারা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।`
তিনি বলেন, `টিআইবি`র কাছে সব দল খারাপ, ভাল শুধু নতুন দল। এক-এগারোর পর আমরা নতুন দল নাগরিক শক্তি দেখেছিলাম। নাগরিক শক্তিকে সংক্ষেপ করলে হয়-নাশ। আসলে নতুন দলের নামে তারা তখন সর্বনাশের খেলায় মেতেছিল। তখন কিন্তু টিআইবি`র মুখে কোন কথা শুনিনি।
মতিয়া বলেন, `আসলে, এই নাশ পার্টি করার পেছনে ছিল বাণিজ্যিক বুদ্ধি। তারা বলেছিল, এসএমএস করুন, নতুন পার্টি হবে। আসলে এসএমএস করে যেন মোবাইল কোম্পানির লাভ হয়, তারা সেটা দেখেছিল। কিন্তু এসএমএস করেই পার্টি শেষ।`
টিআইবিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, `সমালোচনা করেন, সমস্যা নেই। কিন্তু আপনারা তো অসময়ে সরব, সময়ে নীরব। অসত্য তথ্য দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করলে আপনারা কৈফিয়ত দিতে বাধ্য। কেউ কৈফিয়তের উর্দ্ধে নয়।`
মন্ত্রী বলেন, `নতুন করে কেউ কেউ এক-এগারোর খেলা খেলতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী একদিনে হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে সংসদীয় কমিটি হয়েছে। সেই কমিটি মাসের পর মাস ধরে আলোচনা করে এ সংশোধনী এনেছে।বিএনপি কমিটির সভায়ও যায়নি, সংসদেরও যায়নি। কিন্তু হাতিয়ার স্বতন্ত্র এমপি যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ আলোচনা করেছেন, যতটি ইচ্ছা ততটি সংশোধনী বিল এনেছেন।এরপর সংশোধনী পাস হয়েছে।`
বরিশালের জনসভায় বেগম জিয়ার দেশের চেহারা পাল্টে দেয়া সংক্রান্ত বক্তব্যের সমালোচনা করে মতিয়া বলেন, `বেগম জিয়া অবশ্যই দেশের চেহারা পাল্টাবেন, তবে সেটা আলোর দিকে নয়, অন্ধকারের দিকে পাল্টাবেন। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি জঙ্গীবাদ লালন করেছিলেন, একযোগে পাঁচশ স্থানে বোমা ফুটেছিল। আবার ক্ষমতায গেলে ৫০ হাজার বোমা ফাটাবেন।`
মন্ত্রী বলেন, `বেগম জিয়া বরিশালে গিয়েও বলেছেন একবার সুযোগ দিতে, ভারতে গিয়েও বলেছেন একবার সুযোগ দিতে। ভারতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আমাকে একবার সুযোগ দিন, আমি লক্ষ্মী মেয়ের মত আপনাদের কথা শুনব। আপনাদের যা সুযোগ-সুবিধা লাগে সব দেব।`
তিনি বলেন, `বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের এখনকার ইমেজ জয়ের ইমেজ, একাত্তরের বিজয়ের ইমেজ। কিন্তু খালেদা জিয়া তো বিজয়ের অংশীদার নন। তিনি তো সেসময় ক্যান্টনমেন্টে পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে ছিলেন।`
তিনি বেগম জিয়াকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, `আপনি জামায়াতের লাফালাফিতে শক্তি যোগাচ্ছেন। কোণঠাসা, পর্যুদস্ত জামায়াতের জীয়নকাঠি হিসেবে কাজ করছেন।কিন্তু যতই চেষ্টা করুন, আমরা ধৈর্য্য হারাইনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।`
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সাংসদ চেমন আরা তৈয়ব, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেদারুল আলম বেদার, চবি ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদিন এবং প্রয়াতের পরিবারের পক্ষে ভাই তৌহিদুল আনোয়ার ও মেয়ের খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।
নিউজরুম