কাগজে-কলমে হাসপাতালটি ৫০ শয্যার। কিন্তু বর্ধিত ১৯ শয্যা পাঁচ মাসেও চালু হয়নি। বাকি ৩১ শয্যায় প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে রোগী থাকেন। তিন বেলার পরিবর্তে রোগীদের শুধু সকালের নাশতা দেওয়া হয়।
অথচ হাসপাতালের ৫০ জন রোগীকে পাঁচ মাস ধরে তিন বেলা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। আর ভুয়া বিল তৈরি করে দিয়েছেন হাসপাতালেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ঘটনায় হাসপাতালের খাদ্য-পথ্য সরবরাহকারী জামান খানকে শুধু ১৯ জনের বিপরীতে উত্তোলিত অতিরিক্ত তিন লাখ ৪১ হাজার ৯১৬ টাকা ফেরত দিতে ১৬ মার্চ চিঠি দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
ভুয়া বিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার জামান খান বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটসহ আরও নানা সমস্যা আছে। সেগুলো নিয়ে লেখেন। আমি অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।’
সম্প্রতি হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, ২০১২ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট আটপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৯ শয্যা বাড়িয়ে ৫০ শয্যা করা হয়। বর্ধিত শয্যার জন্য নতুন ভবনও তৈরি করা হয়। গত বছরের ২০ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৩১ শয্যাকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। কিন্তু চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলের অভাবে আজ পর্যন্ত নতুন ভবনে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ ঠিকাদার ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি (পাঁচ মাস) পর্যন্ত ৫০ জন রোগীর বিপরীতে তিন বেলার খাবারের বিল উত্তোলন করেন।
১৬ মার্চ দুপুরে আটপাড়া হাসপাতালের দোতলায় নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ২০ জন রোগী ভর্তি আছেন। ১১টি শয্যা ছিল ফাঁকা। তবে হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবিকা নাজমুন্নাহার রেজিস্টার খাতা দেখে জানান, ৩২ জন রোগী ভর্তি আছেন। বাকি ১২ জন রোগী কোথায় জানতে চাইলে সেবিকা বলেন, ‘অনেক রোগী ভর্তি থাকেন কিন্তু হাসপাতালে থাকেন না। প্রয়োজনে আসেন।’
একাধিক রোগী জানান, দুপুর ও রাতে কোনো খাবার দেওয়া হয় না। তাঁদের স্বজনেরা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসেন, নয়তো বাইরে থেকে খাবার কিনে খান।
রোগী, তাঁদের স্বজন, স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ নয়টি। কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও এক্স-রে যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। এ কারণে যাঁদের অন্য কোনো উপায় থাকে না তাঁরাই এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। স্থানীয় আবুল কাসেম জানান, হাসপাতালে যাঁরা বহির্বিভাগে সেবা নিয়ে চলে যান, তাঁদেরও ভর্তি দেখিয়ে অথবা হাসপাতালের খণ্ডকালীন কয়েকজন কর্মচারীকে ভর্তি দেখিয়ে হাসপাতালের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া বিল তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
ভুয়া বিলের ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক হাবিবুর রহমান, কম্পিউটার অপারেটর মাসুদ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমুন্নাহার বিল প্রস্তুত করে দিলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) স্বাক্ষরের পর আমি স্বাক্ষর করি। ওই বিলগুলো আগের (বদলি হওয়া) টিএইচও স্যারের আমলের। তিনি আমার কাছে স্বীকার করেছেন, বিল না দেখে স্বাক্ষর করায় এমনটি হয়েছে।’ হিসাবরক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ডাক্তার না থাকায় এখানে অনেক সময় রোগী ভর্তি হয় না। তাহলে ৫০ জন রোগীর বিল তৈরি করলেন কীভাবে—জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছি। ভুয়া বিলের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে টাকা ফেরত দেওয়ার চিঠি দিয়েছি।’