পিপলু রহমান নাটোর,২৩ অক্টোবর :
অবশেষে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে নাটোরের উত্তরা গণভবন। দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে দর্শনীর বিনিময়ে উত্তরা গণভবন উন্মুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ২ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থকবে। দেশী দর্শনার্থীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ৫ ডলার বা সমপরিমান বাংলাদেশী মুদ্রার বিনিময়ে গণভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।
নাটোর শহর থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে ৪১ দশমিক ৫১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী। ইতিহাসবিদদের মতে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর পত্বন করেন নাটোরের রাজা রামজীবনের অনুগত এবং বিশ্বস্ত দেওয়ান দয়ারাম রায়।
১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভুমিকম্পে দিঘাপতিয়া ও নাটোর রাজবাড়ী সহ নাটোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায় । এসময় দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ বর্তমান প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। এটিই বর্তমানের উত্তরা গণভবন হিসাবে খ্যাত। চারিদিকে ১৩ একর জমির ওপর লেক,সুউচ্চ প্রাচীর বেষ্ঠিত ছোট বড় ১২টি কারুকার্য খচিত ও দৃষ্টি নন্দন ভবন নিয়ে উত্তরা গণভবন। রাজবাড়ীর প্রধান ফটকের ওপরেই রয়েছে সুদৃশ্য কারুকার্য খচিত ঘড়ি ঘর। এই ঘড়িটি এখনো সঠিক সময় দিয়ে যাচ্ছে এবং এক কিলোমিটার দুরে থেকে এই ঘড়ির ঘন্টার শব্দ শোনা যায়। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী রাষ্ট্রীয় ভবন গণভবন হওয়ার পর পরিদর্শনের জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হতো। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই নিরাপত্তা জনিত কারণে অনুমতি মিলতো না। ফলে দেশের দুর দরন্ত থেকে আসা অসংখ্য মানুষকে গনভবন দর্শন করতে না পেরে ফিরে যেতে হতো। বর্তমানে দর্শনীর বিনিময়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তে সকলেই খুশী।
গনপুর্ত বিভাগের কর্মচারী উত্তরা গণভবনের তত্বাবধায়ক আব্দুস সবুর তালুকদার জানান, উত্তরা গনভবন উন্মুক্ত করনের জন্য জেলা প্রশাসন ও গণপুর্ত বিভাগ সকল প্রস্তুতি যেমন আর্চ ওয়ে সিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মেটাল ডিক্টেটর , টিকিট ঘর স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো নিয়োগ ,গাইড নিয়োগ সম্পন্ন করেছে। ইতিপুর্বে রাজবাড়ির ভিতরের ঢুকে অনেকেই দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা এখন সহজেই দেখতে পাবেন। এই গণভবনের অভ্যন্তরে গত ২৭ বছর ধরে নিরাপত্তা সহ রক্ষনাবেক্ষনে কর্মরত খোকন সরদার জানান,গণভবনের আয়তন অনুযায়ী লোকবল কম। সিসি টিভি থাকলেও দর্শনার্থীদের ওপর নজর রাখার দায়িত্বে আরো লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সকলের জন্য দর্শনীর বিনিময়ে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তে সকলেই খুশী। ইতিপুর্বে আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতদের আবদারে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ জানান, উত্তরা গনভবন উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তে সহজেই পরিদর্শন করা যাবে। সেই সঙ্গে এলাকায় বেকারদের কর্মসংস্থান সহ এলাকাবাসী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নিলে ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ির প্ররিদর্শন থেকে কেউ বঞ্চিত হতেননা।
শিশু দর্শনাথী প্রিয়া জানায়, সবার জন্য উন্মুক্ত করায় তারা খুব খুশী। গণভবন দেখতে এসে এখন তাদের আর ফিরে যেতে হবেনা। নাটোরের জেলা প্রশাসক জাফর উল্লাহ জানান, উত্তরা গণভবন নাটোরের ঐতিহ্য। এটি উত্তবঙ্গের প্রধানমন্ত্রী বাসভবন হিসেবে ঘোষনা করা আছে। জনগনের দির্ঘদিনের দাবী এটিকে উন্মুক্ত করার। কেবিনেট থেকে নির্দেশনা পেয়ে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।
তবে লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। আপাতত গণভবনে নিয়োজিত গণপুর্ত বিভাগ ও কালেক্টরেট অফিসের কর্মচারী সহ কিছু আনসার সদস্য দিয়ে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এটি উন্মক্ত করা হবে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
সম্পাদনা আলীরাজ/ আরিফ, নিউজরুম