মহাস্থানগড়ে প্রতœ খনন শুরু হয়েছে। এ বছরের খননের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে গড়ের অল্প দূরে বৈরাগীর ভিটায়। খননের প্রতœ নিয়মানুযায়ী মাটির ভেতরে যাওয়া হচ্ছে। খননে যাতে প্রত্ন নিদর্শন ভেঙ্গে বা কোন কারণে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। এ খনন চলবে মার্চের শেষ পর্যন্ত। প্রয়োজনে সময় বাড়তে পারে। বৈরাগীর ভিটার প্রথম খনন শুরু হয় ১৯২৮ সালে। তারই ধারাবাহিকতায় এ খনন।
গত বছর খনন করা হয় এর পাশেই লইয়ের কুড়ি (যা ফ্রান্স মাঠ নামে পরিচিতি) ভিটায়। সে সময়ের খননে টের পাওয়া যায় কাছের বৈরাগীর ভিটায় মাটির নিচে অনেক কিছু থাকতে পারে। মহাস্থানগড় ঘিরে চারধারে বিশাল এলাকা আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ নগরী। ৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারতবর্ষে আসেন। তিনি মহাস্থানগড়ে প্রায় দুই বছর ছিলেন। তার সি-য়ু-কি বইয়ে মহাস্থানগড়ের ঐশ্বর্য শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসরতার কথা লেখেন। পরে ফ্রান্সের প্রতœতাত্ত্বিক জুল ভ্যান ফরাসী ভাষার অনুবাদ করেন। তারপর ব্রিটিশ লেখক বুকানন হেমিল্টন ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করেন। ১৮৭৫ সালে ভারতবর্ষে প্রথম প্রতœতত্ত্ব বিভাগ গঠন করা হয়। দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম। তিনি মহাস্থানগড় খনন করে হিউয়েন সাংয়ের কথা নিশ্চিত হন। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে মহাস্থানগড়ে খননকাজ চলে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর আশা করছে, এবারের খননে ধ্বংস হওয়া প্রাচীন দুর্গ নগরীর মাটির নিচ থেকে প্রাচীন নানা স্থাপত্য নিদর্শন উদ্ধার হবে। ইতোমধ্যে প্রাচীন দেয়ালের সন্ধান মিলেছে। ধারণা করা হয়, এ দেয়াল গুপ্ত আমলের। তবে কয়েকটি কালের নিদর্শন আছে মাটির নিচে। খননে মিলেছে পোড়ামাটির বল, গুটিকা, নক্সা করা ইট, পোড়ামাটির চাপটি, প্রদীপ, ফলকসহ পোড়ামাটির নানা নিদর্শন। বৈরাগীর ভিটা স্থানটি পূর্বের খননের জায়গা থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে এবং জাদুঘর থেকে কিছুটা দক্ষিণে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত খননকাজ চলে। প্রতœতত্ত্ব অদিফতরের নিজস্ব অর্থায়নে ফিল্ড ডিরেক্টর হিসেবে আছেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা। সঙ্গে আছেন মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মজিবর রহমান, সহকারী কাস্টডয়িান মোঃ যায়েদ, সিনিয়র ড্রাফটসম্যান আফজাল হোসেন, ফটোগ্রাফার আবুল কালাম আজাদ।
কাস্টডিয়ান মজিবর রহমান বলেন, খননের পর বৈরাগীর ভিটা স্থানটি যাতে পর্যটকদের দর্শন উপযোগী হয় সে ব্যবস্থা করে রাখা হবে।