জামালপুর জেলার ইসলামপুরে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ৫ হাজার ১৭১ জন শ্রমিকের অধিকাংশেরই স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা উত্তোলন এবং নন ওয়েজ কস্ট বাবদ বরাদ্দকৃত ৪৬ লাখ টাকা শ্রমিকদের মাঝে ব্যয় না করে সমূদয় টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ১ম পর্যায়ের আত্মসাত প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের বুধবার থেকে ইসলামপুরের ১২টি ইউনিয়নের ৬৬টি প্রকল্পের কাজে অধিকাংশ শ্রমিক অনুপস্থিত রেখে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকাও আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলার ন্যায় জামালপুরের ইসলামপুরে অতি দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্প চালু করেছেন। সেই সঙ্গে এ প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক শ্রমিককে ব্যাংক একাউন্ট-এর মাধ্যমে মজুরি উত্তোলনের ব্যবস্থা করেছেন। অথচ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ইসলামপুরের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সুপারভাইজার, ব্যাংক ম্যানেজার এবং ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যোগসাজশে ইসলামপুরের ১২টি ইউনিয়নের ৭১টি প্রকল্পের ৫ হাজর ১৭১ জন শ্রমিকের অধিকাংশদেরই স্বাক্ষর জাল করে ইসলামপুরের অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলো থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। একই ধারাবাহিকতায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে ইসলামপুরের ১২টি ইউনিয়নের ৬৬টি প্রকল্পে বেশিরভাগ শ্রমিক অনুপস্থিতি রেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজে কলমে কাজ শুরু দেখানও হয়েছে। এ ৬৬টি প্রকল্পে ৫ হাজার ১৭৬ জন অতি দরিদ্র শ্রমিককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের উদ্বোধনী দিবসে ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের ৬টি, পলবান্ধা ইউনিয়নের ৫টি, গোয়ালেরচর ইউনিনের ৫টি, চিনাডুলি ইউনিয়নের ৪টি এবং পাথর্শী ইউনিয়নের ৮টি প্রকল্পের রাস্তায় কোন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। এছাড়াও এ উপজেলার নোয়ারপাড়া, সাপধরী, বেলগাছা, কুলকান্দি, চরপুটিমারী, চরগোয়ালিনী ও গাইবান্ধা ইউনিয়ন সমূহের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের উদ্বোধনী দিবসে কোন শ্রমিক কাজ করেনি এবং পরবর্তী কর্মদিবসে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজে বেশিরভাগ শ্রমিক অনুপস্থিত থাকছে। তবে কয়েকটি প্রকল্পে কিছু শ্রমিক দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নামমাত্র কাজ চলছে। ইসলামপুরের ইউএনও নজরুল ইসলাম বলেন উপজেলার সব ইউনিয়নেই গত বুধবার থেকে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, এ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অতি দরিদ্র শ্রমিকদের তালিকাভুক্ত করে ব্যাংকে শ্রমিকদের নামে হিসাব খুললেও প্রকৃত শ্রমিকদের বঞ্চিত করে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যাংক ম্যানেজারের যোগসাজশে শ্রমিকদের স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করেন। এছাড়াও ইসলামপুরের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ১ম পর্যায়ের নন ওয়েজ কস্ট বাবদ বরাদ্দকৃত ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ২২৮ টাকা এবং শ্রমিক সরদার মজুরি বাবদ বরাদ্দকৃত ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় না করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা যোগসাজশে আত্মসাত করেছেন।
শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কর্মসংস্থান প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মতই ২য় পর্যায়েও শ্রমিকদের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অপচেষ্টায় ২য় পর্যায়ের উদ্বোধনী দিবসেও সবকটি প্রকল্পে শ্রমিক অনুপস্থিত রাখাসহ পরবর্তী কর্মদিবসে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজে শ্রমিক অনুপস্থিত থাকছে। তবে কয়েকটি প্রকল্পে কিছু শ্রমিক দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নামমাত্র চলছে।
এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংক ইসলামপুর বাজার শাখার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম ও কৃষি ব্যাংক মলমগঞ্জ বাজার শাখার ম্যানেজার একাব্বর আলী জানান, ব্যাংকের গ্রাহক কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিকদের অনুপস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দায়িত্বে বেয়ারার চেকে শ্রমিকদের মজুরির টাকা প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রূপালী ব্যাংক ধর্মকুড়া বাজার শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুম জানান, ব্যাংকে টিপসই যাচাই করার যন্ত্র না থাকায় কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরির টাকা প্রদানে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সুপারিশ নেয়া হয়েছে। –