নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ নির্বাচনের দাবিতে আবারও রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এই লক্ষ্যে শিগগিরই জেলা সফর শুরু করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সিনিয়র নেতারাও বের হচ্ছেন তৃণমূল সফরে। আগামী দু-এক মাস সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে আন্দোলনের একটি ভালো সূচনা করতে চায় দলটি। আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি সংলাপের দিকেও জোর দেয়া হবে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনদের সংলাপে বসাতে দেশী-বিদেশী চাপ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনের পরপরই আন্দোলনের কৌশল ঠিক করার কথা থাকলেও আপাতত তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠক ডাকার সম্ভাবনা নেই। জানা গেছে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে তাদের জামিনে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা মুক্তি পাওয়ার পরপরই দলের নীতিনির্ধারণী ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ডাকবেন খালেদা জিয়া। সেখানেই চূড়ান্ত করা হবে আন্দোলনের কৌশল। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার জেলা সফর, দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়া সঠিক ছিল এটা এখন দেশে-বিদেশে সবার কাছেই প্রমাণিত। বিশেষ করে সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তা আবারও প্রমাণ করেছে যে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আন্দোলনের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও অনেকটা চাঙ্গা। দল গোছানোর পাশাপাশি আপাতত জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। আমাদের দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তিগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে শিগগিরই দলের চেয়ারপারসনসহ সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে সফরে বের হবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অতি দ্রুত একাদশ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামার সার্বিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে দাবির সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা।
সূত্র জানায়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু কৌশলও নেয়া হচ্ছে। আন্দোলনের দাবির পক্ষে যথেষ্ট যৌক্তিকতা তুলে ধরতে ৫ জানুয়ারির ভোটরবিহীন নির্বাচন ও সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির বিষয়টি সামনে আনা হবে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের নানা তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় কিভাবে ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্র দখল করছে তার একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করার কাজ চলছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে সাধারণ মানুষের সামনে এগুলো তুলে ধরা হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তারা।
সূত্র জানায়, আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ মাসেই জেলা সফরে বের হচ্ছেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনের পর যেসব জেলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে ওই জেলাগুলোকেই প্রাধান্য দিয়ে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এছাড়া যেসব জেলায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং নেতাকর্মীরা নিখোঁজ রয়েছেন ওইসব জেলাও সফর করবেন খালেদা জিয়া। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করবে দলটি।
সূত্র জানায়, জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে অবিলম্বে একাদশ নির্বাচন নিয়ে সমঝোতায় আসতে দেশী-বিদেশী চাপ অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। বিশেষ করে সরকারকে সংলাপে বসাতে দেশের সুশীল সমাজসহ শক্তিশালী দেশগুলোর চাপ অব্যাহত রাখতে কূটনীতিক তৎপরতা জোরদার করার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা প্রমাণ করেছে তাদের কাছে সাধারণ মানুষের ভোট নিরাপদ নয়। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই যৌক্তিক আন্দোলন কর্সসূচি ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।