ঢাকা (০৭ জানুয়ারী) : স্পিকারসহ সংসদ সদস্যরা সংসদে মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা মুখর থাকলেও অনেক কেবিনেট সদস্যই তাদের আচরণে পরিবর্তন ঘটাননি। চলতি নবম জাতীয় সংসদের ১৫টি অধিবেশনে ৩৩৭ কার্যদিবস সংসদ চললেও ১১ জন মন্ত্রী ২০০ দিনেরও কম সংসদে এসেছেন। ২৫০ দিনের বেশি এসেছেন ১৩ জন মন্ত্রী।
মাত্র চারজন মন্ত্রী ৩০০ কার্যদিবসের বেশি সংসদে এসেছেন। মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচনাকারী সদস্যরা বলছেন, সংসদের প্রতি মন্ত্রীদের আগ্রহ কমে গেছে।
সংসদের কার্যবাহের সারাংশ থেকে জানা গেছে, ৩০০ কার্যদিবসের বেশি সংসদে এসেছেন ভ‚মিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা (৩০৯ দিন), সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ (৩০৮ দিন), কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী (৩০১ দিন) এবং রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক (৩২১ দিন)। মুজিবুল হক মন্ত্রী হওয়ার আগে হুইপ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
সংসদে মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,‘‘সংসদের প্রতি মন্ত্রীদের আগ্রহ কমে গেছে। জনগণের হয়ে মন্ত্রীদের কাজের জবাবদিহিতা চাওয়ার যে অধিকার একজন এমপির আছে, মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির ফলে তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা না থাকলে সংসদ কার্যকর হয় না।’’
এদিকে ২৫০ কার্যদিবসের বেশি সংসদে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৬৬ দিন), যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (২৯০ দিন) পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন (২৮৬ দিন), দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (২৬১ দিন), ভ‚মি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান (২৭৫ দিন), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস (২৬৭ দিন), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই (২৫১ দিন), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম¥দ (২৮১ দিন), ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন (২৭৭ দিন), বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান (২৯১ দিন), অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত (২৬১ দিন) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই (২৫১ দিন), গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান (২৭৭ দিন)।
২০০ কার্যদিবসেরও কম সংসদে এসেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার (১৭৪ দিন), বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (১৩৫ দিন), স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (১৬৮ দিন), স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক (১৬০ দিন), শ্রমমন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু (১৭৭ দিন), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন (১৭৬ দিন), নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান (১৮৮ দিন), সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ (১৫০ দিন), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর (১৬৬ দিন), পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (১২৭ দিন) এবং পার্বত চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার (১১৯ দিন)।
চলতি সংসদের বিভিন্ন সময় সংসদে মন্ত্রীদের উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের সদস্যরা। গত বছরের ২৭ অক্টোবর সংসদ অধিবেশনে বেসরকারি সদস্য দিবসে মন্ত্রীদের অনুপস্থিত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। ওইদিন পয়েন্ট অব অর্ডারে মন্ত্রীদের সমালোচনা করেন তিনি। পরে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম এবং চিফ হুইপ আব্দুস শহীদও তোফায়েলের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। ওই সময় অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরুও মন্ত্রীদের অধিবেশনে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান।
২০১১ সালের ২১ জুন মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে এমনই এক আলোচনায় খোদ স্পিকার আবদুল হামিদও বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা সংসদে উপস্থিত থাকেন না। সংসদে মন্ত্রীদের থাকা উচিত। ১৬ আনার মধ্যে ১৪ আনা মন্ত্রীই এখন সংসদে নেই। ৫০ শতাংশ মন্ত্রীও সংসদে উপস্থিত থাকলে প্রাণচাঞ্চল্য থাকে।’’
একই ভাবে গত বছরের ১২ মার্চ সংসদ অধিবেশনে মাত্র সাত জন মন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বেসরকারি সদস্য দিবসে (বৃহস্পতিবার) মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে একাধিক দিন স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কার্যবাহের সারাংশ অনুসারে অন্যান্য মন্ত্রীদের সংসদের উপস্থিতির হার হচ্ছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন (২২৮ দিন), বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের (২০৭ দিন), শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী (২০১ দিন) স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু (২৩৮ দিন), পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার (২০৯ দিন), তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (২৩১ দিন), শ্রম ও কর্ম সংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান (২২২ দিন), স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক (২১২ দিন), ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাজাহান মিয়া (২৪৮ দিন), খাদ্যমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক (২০৬ দিন), সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন (২৩০ দিন), স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির (২২৭ দিন) এবং আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম (২১১ দিন)।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন (২৩০ দিন), দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (২৩৪ দিন), শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (২৩২ দিন), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম (২৪৭ দিন), পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি (২১০ দিন), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. আফছারুল আমীন (২২৯ দিন), মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী (২১৬ দিন)।
মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ বলেন, ‘‘প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকলে তার মন্ত্রণালয়ের কাজের সহায়তা হয়। তবে মন্ত্রী না থাকলে তার পরিবর্তে অন্য মন্ত্রীর জবাব দেওয়ার বিধান রয়েছে।’’ এদিকে চলতি নবম জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন জোটের এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংসদে এসেছেন আওয়ামী লীগের নীলফামারী-৪ আসনের সদস্য এ এ মারুফ সাকলান। তিনি ৩৩৬ কার্যদিবস সংসদে এসেছেন। তার পরেই আছেন নরসিংদী-৩ আসনের জহিরুল হক ভ‚ঞা মোহন। তিনি ৩৩৩ কার্যদিবস সংসদে উপস্থিত ছিলেন। আর সবচেয়ে কম এসেছেন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। তিনি সংসদে ছিলেন মাত্র ৯৪ কার্যদিবস।
নিউজরুম