রুপসীবাংলা, চট্টগ্রাম (১১ নভেম্বর) :চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিভিন্নএলাকায় রোববার জামায়াত ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবির ব্যাপক তান্ডবচালিয়েছে। শিবিরের কর্মীরা আকস্মিক মিছিল বের করে পুলিশের পিকআপ ভ্যান সহকমপক্ষে ৯টি গাড়ি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ারবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও তিনটি দোকান ভাংচুর করেছে।
শিবিরকর্মীদের হামলায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) বশিরআহমেদ ও তিন কনস্টেবল এবং দু`জন সিএনজি অটোরিক্সা চালক সহ ৬ জন গুরুতর আহতহয়েছেন।এছাড়া নগরীর চকবাজার এলাকায় পুলিশ ও শিবির কর্মীদের মধ্যেইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে শিবির কর্মীরা পুলিশের পিক আপভ্যানে হামলা চালিয়ে ২০ রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে গেছে।নগরপুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো.শহীদুল্লাহ বলেন, `শিবিরের সন্ত্রাসীরা আকস্মিকভাবে মিছিল বের করে ভাংচুর করেছে। তারা পুলিশসদস্যদের উপরও হামলা করেছে। শিবিরের পূর্বঘোষিত কোন কর্মসূচী না থাকলেঝটিকা মিছিল বের করে তারা বিভিন্ন সহিংস কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে।`
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ১০টার দিকে নগরীর ষোলশহর দু`নম্বর গেইটএলাকায় আকস্মিকভাবে শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী `নারায়ে তকবীর` শ্লোগান দিয়েমিছিল শুরু করে। মিছিলটি দু`নম্বর গেইট থেকে জিইসি`র মোড়ের দিকে আসার পথেদৈনিক পূর্বকোণ অফিসের অদূরে একই অভিমুখী একটি বিআরটিসি দোতলা বাস ভাংচুরশুরু করে। এসময় একই এলাকা দিয়ে যাওয়া পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান, একটিমাইক্রোবাস এবং একটি সিটি সার্ভিসের বাসও ভাংচুর করে শিবিরের কর্মীরা।
নগরীরবায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি (তদন্ত) নাসির উদ্দিন জানান, বায়েজিদ বোস্তামি থানার পিক আপ ভ্যানটি দামপাড়া পুলিশ লাইনে জ্বালানি তেলনেয়ার জন্য যাচ্ছিল। গাড়িটি পূর্বকোণ অফিস অতিক্রমের আগেই শিবিরের কর্মীরাবড় ইট, ইটের টুকরা এবং গজারি লাঠি দিয়ে ভাংচুর শুরু করে ও পুলিশের উপরহামলা চালায়।হামলায় আহত বায়েজিদ বোস্তামি থানার এস আই বশির আহমেদ ওতিন কনস্টেবলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেতিনি জানান।
এদিকে ঘটনার সময় ওই এলাকায় পুলিশের একটি টহল টিম এগিয়েআসার চেষ্টা করলে শিবিরের কর্মীরা তাদের উপর ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে এবংতাদের ধাওয়া দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টহল টিমের এক কনস্টেবলবলেন, `আমরা শিবিরের সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের জন্য এগিয়ে যাবারচেষ্টা করলে স্যার (টহল টিমের এস আই) চীৎকার দিয়ে বলেন, দৌঁড়ে পালাও। তখনআমরা পেছন দিকে পালিয়ে যায়।`নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, `শিবিরের সন্ত্রাসীরা পুলিশের পিকআপ ভ্যানেহামলা করার পর সেখানে অবস্থানরত আনসার সিপাহীর থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ২০রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে।`
প্রত্যক্ষদর্শীরাজানান, দু`নম্বর গেইটে ভাংচুর করে শিবিরের কর্মীরা আবারও প্রবর্ত্তক মোড়েরদিকে মিছিল করে যাবার সময় নাসিরাবাদে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামেনঅস্থায়ী রোড ডিভাইডারগুলো ব্যাপক তছনছ করে এবং ওই কার্যালয়ের সামনেকর্তব্যরত নিরপত্তা কর্মীদের দিকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে।এরপরমিছিলটি মিমি সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে যাবার সময় তিনটি সিএনজিঅটোরিক্সা ভাংচুর করে। এতে দু`জন চালক গুরুতর আহত হন। তাদের চমেক হাসপাতালেভর্তি করা হয়েছে।
প্রবর্ত্তক মোড়ে ইকবাল (২৩) নামে আহত একঅটোরিক্সা চালক বলেন, `ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পের মত বড় বড়লাঠি দিয়ে গাড়িগুলো ভেঙ্গেছে। হামলা দেখেই যাত্রীরা বের হয়ে ভয়ে পালিয়েগেছে। আমি বের হয়ে অটোরিক্সার সামনে দাঁড়ালে তারা আমার হাতে লাঠিগুলো দিয়েপেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি পড়ে যাই।`প্রত্যক্ষদর্শী প্রিমিয়ারবিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আরাফাত বাংলানিউজকে জানান, মিমি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে প্রবর্ত্তক মোড়ে এসে কয়েকজন শিবির কর্মীইটের টুকরা ছুঁড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের সামনে আয়না ভাংচুর করে। তাদেরপ্রত্যেকের হাতে বড় বড় লাঠি ছিল।
এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশিক্ষকের প্রাইভেট কার, এক ছাত্রীকে নিয়ে আসা একটি মাইক্রোবাস এবংবিশ্ববিদ্যালয়ের নিচতলায় তিনটি দোকান ভাংচুর করে। দোকানগুলো হচ্ছে, খাবারদোকান সিজল, ডাইন আউট এবং ফুড ম্যাক্স।
সিজলের ব্যবস্থাপক মো.ইলিয়াসবাংলানিউজকে বলেন, `মিমি সুপারের সামনে থেকে শিবিরের ছেলেরা কয়েকজনপুলিশকে ধাওয়া করে। পুলিশ সদস্যরা আমাদের দোকানের সামনে চলে আসে। এসময়শিবিরের লোকজন দোকান ভাংচুর শুরু করে। আমার দোকানের ভেতর কয়েকজন ছাত্রীছিল। তারা চীৎকার করে কান্না শুরু করে দেন।`এরপর শিবিরের কর্মীরানগরীর চকবাজার এলাকার দিকে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা মিছিল শুরু করলে কয়েকপ্লাটুন পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। শিবিরের কর্মীরা পুলিশের ধাওয়ার মুখেচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সেখানথেকে পুলিশের উপর ইট, পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তবে পুলিশের ধাওয়ার মুখেটিকতে না পেরে তারা চমেকের ছাত্রাবাসের সামনে দিয়ে চলে যায়।
এদিকেপ্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থীরা সকাল সোয়া ১১টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে। তারা প্রবর্ত্তক মোড়েটায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে এবং দু`পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ করেদেয়।
প্রায় আধাঘণ্টা পর নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর)মো.শহীদুল্লাহ`র নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরেপ্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশকরেন।
এদিকে শিবিরের হামলায় আহতদের দেখতে রোববার দুপুরে চট্টগ্রামমেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান পুলিশ কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম। পরে পুলিশকমিশনার সহ সিএমপি`র উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিকতান্ডবের ঘটনায় করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন।
জামায়াত-শিবিরের বিবৃতি
চট্টগ্রাম নগরীতে জামায়াত-শিবিরের তান্ডবের পর রোববার বিকেলে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতারা।বিবৃতিতেতারা দাবি করেছেন, বিভিন্ন মিডিয়ার নগরীর ষোলশহর ও প্রবর্তক মোড়ে হামলা, গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে শিবিরকে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছেতা সঠিক নয়। ষোলশহর মোড়ে জামায়াত-শিবিরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলঅনুষ্ঠিত হয়। এতে কোন ধরণের হামলা, গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি।পরবর্তীতে প্রবর্তক মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ভাংচুর ইত্যাদির সাথেজামায়াত শিবিরের কোন সম্পর্ক নেই।
বিবৃতিতে যাদের নাম উল্লেখ করাহয়েছে তারা হলেন, জামায়াত ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আমির ও সাংসদমুহাম্মদ শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারী নজরুল ইসলাম, নগর উত্তর ছাত্রশিবিরসভাপতি মুহাম্মদ ইসমাইল, সেক্রেটারী আ ম ম মাসরুর হোসাইন এবং নগর দক্ষিণসভাপতি মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ও সেক্রেটারী এম এইচ সোহেল।
নিউজরুম