এবার ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে’ ইশতেহার দেবে কোটা আন্দোলনকারীরা

0
619
Print Friendly, PDF & Email

শীর্ষ নিউজ, ঢাকা: নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ঢাবির প্রশ্নবিদ্ধ ভর্তি পরীক্ষা বাতিলসহ সামাজিক নানা ইস্যুতে সরব কোটা আন্দোলনকারীরা এবার ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ গঠনে সোচ্চার হয়েছেন। এজন্য হাতে নিয়েছেন ‘তারুণ্যের ইশতেহার-২০১৮’ নামক অভিনব এক কর্মসূচি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তরুণ সমাজ কী চায়- তা জানিয়েই তারুণ্যের ইশতেহার দেবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। শীঘ্রই ঘোষিত এ ইশতেহারে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের কাঠামো কেমন হওয়া উচিত তা যেমন থাকবে; তেমনই থাকবে শিক্ষিত তরুণ সমাজের দাবি-দাওয়া ও তাদের কাজে লাগিয়ে কীভাবে বাংলাদেশকে সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছানো যায় তার বিবরণ।
সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন ধরে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চলে আসছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে কোটা সংস্কারের জোর দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সকল প্রকার কোটা বাতিল করেন। পরে তার পরিপত্র জারি করে সরকার। তবে আন্দোলনকারীরা বলছে, কোটা বাতিল নয়, যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। ধারণা ছিল- বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে কোটা বাতিলের যে পরিপত্র জারি হয়েছে; তারপর আর আন্দোলনের প্লাটফর্ম থাকবে না। কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করে আগের মতোই সরব রয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবি তোলা আন্দোলনকারীরা। এখন তারা শুধু বিভিন্ন কর্মসূচিই পালন করছেন না, রীতিমত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ছাত্র ও তরুণদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, বর্তমানে তাদের ফেসবুক গ্রুপের ‘কোটা সংস্কার চাই (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ)’ সদস্য সংখ্যা ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৬১৯ জন; যা প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার করে বাড়ছে। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই গ্রুপের সদস্য। মূলত এসব শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলোকে তারুণ্যের ইশতেহার দেবেন তারা। যা এ সপ্তাহেই ঘোষণা হবে।
কোটা আন্দোলনকারীদের গ্রুপ ঘেঁটে দেখা গেছে, ‘তারুণ্যের ভাবনা ১৮’ ইশতেহারে যৌক্তিক ও সময় উপযোগী আপনার একটি ইশতেহার মন্তব্যে লিখুন’- এমনই একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। যাতে কেউ লিখেছেন, ‘নিয়োগ ১০০% নিরপেক্ষ করুন’; কেউবা লিখেছেন, ‘জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। যাতে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে মাস্টার্স পর্যন্ত। আবিষ্কারক বা বিজ্ঞানীদের জন্য সব থেকে বেশি পৃষ্ঠপোষকতা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।’ সংগঠকরা বলছেন, মূলত শিক্ষার্থীদের এমন মতামতের ভিত্তিতেই তারা একটি ইশতেহার প্রণয়ন করবেন; যা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণার পর তা বাস্তবায়নে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হবে।
জানা গেছে, তাদের ইশতেহার ভাবনায় দেশের সামগ্রিক কাঠামোর বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি নিজেদের দাবি ছাড়াও সব মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে। ওই ইশতেহারে নিজেদের দাবির মধ্যে থাকবে আন্দোলনের সময়ে যারা নেতাদের ওপর হামলা করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ দেশের যেখানেই পেশিশক্তির মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠ রোধের চেষ্টা হয়েছে সেসব ঘটনার বিচার দাবি, নিজেদের নামেসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজনের বিরুদ্ধে যেসব হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার।

এর বাইরেও সব সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার, চাকরির ফরম পূরণের জন্য সব ধরনের ফি নেয়া বন্ধ করা, মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরের অধীনে হওয়া চাকরি পরীক্ষাসমূহের বদলে সমন্বিত চাকরি বোর্ড করে তার মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ যাতে বছরজুড়ে উচ্চ খরচে পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন না পড়ে, শুধু রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আলাদাভাবে না নিয়ে কয়েকটি গুচ্ছের আওতায় গ্রহণ, নীতিমালা বা আইনগত জটিলতার কারণে যেসব স্থানে নিয়োগ দিতে বছরের পর বছর লেগে যায় সেসব ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা দূর করা, শুধু শিক্ষিত বেকার নয় বরং সব তরুণদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করাসহ থাকবে আরও অনেক বিষয়। এ পর্যায়ের বড় অংশই থাকবে দেশের মানুষের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত।
অন্য অংশে থাকবে- দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত, কেন বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা না করে রাষ্ট্রের দেয়া রেডিমেড চাকরির দিকে তাকিয়ে থাকছে, তরুণদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে রাষ্ট্রের কী কী করণীয় আছে, কোন কোন সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র বাড়ানোর সুযোগ আছে সেসব কিছু।
শিক্ষা, কর্মসংস্থানে সমান সুযোগের বাইরেও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ যে ইশতেহার ভাবনা দিতে যাচ্ছে সেখানে রাষ্ট্রের কাঠামো কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও থাকবে তরুণদের ভাবনার বিষয়। এখানে দেশের সরকার, সংসদ, বিচারব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গঠন কাঠামো কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও থাকবে নিজেদের বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা গণমাধ্যমকে জানান, তাদের ইশতেহার ভাবনার মধ্য দিয়ে তারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিশেষ একটি বার্তা দিতে চান। আর তা হলো- সুশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় না। দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যেও পৌঁছা যায় না। আর এ কারণে তরুণরা চাইছে সব রাজনৈতিক দল সহিংসতা এবং জোর-জুলুমের পথ পরিহার করে শান্তির পথে এসে দেশ পরিচালনা করবে। যেখানে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। আবার কেউ অবিচারেরও শিকার হবে না।
শীর্ষ নিউজ/

শেয়ার করুন