এখনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গায়েবি মামলায় গ্রেফতার বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, অবিলম্বে গ্রেফতার ও মামলা দেয়া বন্ধ না হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে এবং নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ‘নির্দেশই’ নির্বাচন কমিশন অনুসরণ করছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার আশ্বাস দেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। গণভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হবে না বললেও তিনি তার সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেননি। তফসিলের পরও সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসন পাবে না জেনেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশ, সরকারের যে নির্দেশ সেই নির্দেশই অনুসরণ করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভয় পাচ্ছেন বলেই এত সব কিছু আয়োজন করছেন নির্বাচনটাকে পুরোপুরি করায়ত্ত করার জন্য। আজকে খুব স্বাভাবিকভাবে জনগণের কাছে প্রশ্ন এসে গেছে যে, নির্বাচন হবে কি না? এই প্রহসনের নির্বাচন করে লাভ কী? যে কথাটা এসেছে- আস্থা, সেই আস্থা আগেও ছিল না, এখনো নেই। : গত দুই দিনে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় প্রার্থী গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা অত্যন্ত পরিষ্কার এই নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে নেই। তারা সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে চাই, গায়েবি মামলায় গ্রেফতার বন্ধ করুন, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিন। অন্যথায় উ™ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সকল দায়-দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে। : আগামীকাল অথবা পরশু বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাবেন বলে জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে যাবো। আগামীকাল অথবা পরশু গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দিয়ে আসব। আমরা বহু চিঠি নির্বাচন কমিশনে দিয়েছি। একটা চিঠিরও উত্তর আসেনি, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কী হয়েছে? রদবদলের কথা বলেছি। নারায়ণগঞ্জের এসপি যার স্ত্রী একজন এমপি ছিলেন। তাকে বদলি করে সেখানে দেয়া হয়েছে গাজীপুরের হারুন (হারুন অর রশীদ) সাহেব। অর্থাৎ জ্বলন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়ছে- এই অবস্থা ? এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন আপনারা থাকবেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে থাকার জন্যই তো অংশ নিচ্ছি। নির্বাচন করতে এসেছি এতো কষ্ট করে ৪/৫ দিন ধরে আমরা কাজ করলাম প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিলাম। আপনার (প্রশ্নকারী সাংবাদিক) কি মনে হয় নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জনগণ থাকবে? আপনি বলুন। নির্বাচনে বিএনপি থাকা না থাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন-এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, তার প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে চাই না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনে হয় যে, অবান্তর কথাবার্তা। এগুলো বলার কোনো মানে হয় না। গতকাল তিনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন আমরা নাকি দলকে, জোটকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি না। এটা তার চিন্তা-ভাবনা। এত দুশ্চিন্তা তার কেন? এর আগে উনি বলেছেন যে, আমরা নাকি প্রার্থী খুঁজে পাবো না। আসলে তিনশ আসনে আমাদের দুইয়ের অধিক প্রার্থী। তাকে বলব, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিন, সকলকে সমান সুযোগ দিন। দেখেন কে কতটা আসন পায়। তারা (সরকার) জানেন ৩০টার বেশি আসন তাদের নেই। সেই কারণে তারা আজকে এই খেলাগুলো খেলছে। নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র দাখিল করা ৬৯৬ জন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কতটা মামলা রয়েছে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সকলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আমার হলফনামা যখন আমি লিখতে গেছি ৪ পৃষ্ঠা গেছে আমার মামলার বিবরণে। আমার বিরুদ্ধে মোর দেন ১শ মামলা। আমাদের স্থায়ী কমিটির এখানে যারা বসে আছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সারাদেশে প্রায় সব আসনে সরকার ও তার দলীয় প্রার্থীরা বড় বড় মিছিল নিয়ে গেছে এবং বক্তৃতা করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। আর আমাদের প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, অপহরণ করা হয়েছে, তাদেরকে গুম করা হয়েছে। আমাদের নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, আরেকজন মাগুরার মনোয়ার হোসেন খান যারা প্রার্থী তাদেরকে আটক করা হয়েছে। ভোলার লালমোহনে আমাদের দলের নেতা হাফিজউদ্দিনের বাড়িতে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে। আজকে পত্রিকায় দেখেছেন যে, আমাদের নেতা সাদেক হোসেন খোকা সাহেবের ছেলে যিনি ঢাকার একটি আসনের প্রার্থী তাকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি করায়ত্ত করা হয়েছে এবং হাইকোর্ট থেকেও দেখা যাচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু কিছু আদেশ আসছে যা কোনো মতেই একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। রবং তা বাধার সৃষ্টি করছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো উদ্যোগই গ্রহণ না করে সরকারের নীল-নকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে অভিযোগও করেন তিনি। মনোনয়পত্র দাখিলের দিন থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের একটি তালিকাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, গ্রেফতার চলছেই, অব্যাহতভাবে আছে। এই অবস্থায় নির্বাচন কতটুকু সম্ভব, কীভাবে সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের যে কথা যা কিছু করছে পুলিশ তা তার নির্দেশেই করছে। গতকাল উনি (সিইসি) বলেছেন যে, খুব খুশি। তার প্রতি আস্থা আছে বলেই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করছে। আমরা বলছি, গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে। গায়েবি মামলার চার্জশিট দেয়া শুরু হয়েছে। এভাবে এই নির্বাচনের পরিণতি কী হবে এটা আমরা বুঝতে পারছি না। উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে অভিযোগও করেন মির্জা ফখরুল। : এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই। সবাই ধানের শীষের প্রার্থী। নির্বাচনে থাকবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এতকিছু করছি তো নির্বাচনে থাকার জন্য, আপনার কি মনে হয়। ভোলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদের বাসায় নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ক্যাডার বাহিনী হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ৫ বার ওবায়দুল কাদেরকে পরাজিত করছি, ২০০৮ সালে অনেক কারচুপির পর ১৩০০ ভোটে পরাজিত হই। দুই ঈদে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। তফসিল ঘোষণার পরে আশা করেছিলাম সবাই নির্ভয়ে কাজ করতে পারবো। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। বলতে চাই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।দিনকাল রিপোর্ট :