আগামী নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে জিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বীরের বেশে জেল থেকে মুক্ত করে আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য হয় সমগ্র জাতিকে একত্র করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবো, নয়তো ভোটযুদ্ধে গিয়ে ভোটে জিতে বেগম খালেদা জিয়াকে বীরের বেশে জেল থেকে মুক্ত করে আনবো। : একই অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা তার সেনাবাহিনী এখন শুনছে না। পুলিশ এখন আমাদেরকে বলছে আন্দোলনের মাঠে অবস্থান করতে। বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের ভিত নড়ে গেছে। মানুষ যাদেরকে ভয় করেন, সেই বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে। তারা কোন পথে যাবে সেটার জন্য যোগাযোগ করছে। যখন বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে তখন ভয়ে সরকারের হাঁটু কাঁপা শুরু হয়েছে। বুঝতে পারছে তাদের ভিত নড়ে গেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের বাংলাদেশ, আসন্ন নির্বাচনে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। : কর্নেল অলি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমরা বসে বসে কলা খাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। বিএনপিকে বলেছি- জোটের প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে বানরের পিঠা ভাগ করার মতো করবেন না। যোগ্য প্রার্থীদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমার দলের ৪৬ জন প্রার্থী ছিল। কিন্তু আমি তাদের বলেছি যোগ্য প্রার্থীই কেবল নমিনেশন পাবে। বিএনপির পিঠে সওয়ার হয়ে এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। যারা নমিনেশন পাবে তাদের অবশ্যই নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। : তিনি বলেন, বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকেই আমাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা সুযোগ খুঁজছে সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য। সরকারের পক্ষে কাজ না করে নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করছে। : সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অলি বলেন, আমি আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা এতোদিন সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন তারা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আমরা ক্ষমতায় আসলে তাদের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। : একই সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পরাধীন থাকতে হয়। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসলে এই সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত ডিসকভারি দেখি। ছোট একটা বাঘ তার চেয়ে ১০ গুণ বড় একটি হাতিকে ফেলে দেয়। এটা থেকে বুঝতে হবে আপনাদের কি করা উচিত। করণীয় একটাই। সেটা হল প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় যান। মা-বোনদের বোঝান। তারা বের হয়ে এসে ভোট দিলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সনের নির্বাচনটা অন্য নির্বাচন থেকে ভিন্ন। এবার জনগণ মুখ খুলেছে। গণতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে অঙ্গীকার আমরা দিয়েছিলাম তার জবাব দিতে চাই, জবাব নিতে চাই। আমাকে রাস্তায় নামতে দেবে না। পুলিশ আছে। এসব ম্যানমেনে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমি এমন কথা শুনতে চাই না। বাতাস অন্যদিকে বইছে দেখছেন না? ঢাকার মিটিং, রাজশাহীর মিটিংয়ে দেখেননি। সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তার পরও মানুষ পায়ে হেঁটে সমাবেশে চলে এসেছে। ৬০-এর দশকে মওলানা ভাসানীর ডাকে মানুষ যেভাবে এসেছে। এখনও সেভাবে মানুষ আসছে। যাদেরকে ভয় করেন, সেই বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে। তারা কোন পথে যাবে সেটার জন্য যোগাযোগ করছে। যখন বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে তখন ভয়ে সরকারের হাঁটু কাঁপা শুরু হয়েছে। বুঝতে পারছে তাদের ভিত নড়ে গেছে। এর পরও যারা এই সরকার ও প্রশাসনকে ভয় পান তাদের দিয়ে কিছু হবে না। কারণ ডাক্তারি ভাষায় একটা কথা আছে- ভয়ের কোনো চিকিৎসা নেই। : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। তার জন্য সুবিচার চাই। কারণ সুবিচার হলেই তিনি মুক্তি পাবেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের কাছে গিয়ে বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার করে বলতে হবে। শ্রমিকরা মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন পান। তাদের মজুরী বৃদ্ধি করা হবে। প্রত্যেকের জন্য রেশন চালু করা হবে। বিচারকরা ৬ মাস ঘুমান। এই জায়গায় ব্যাপক সংস্কার করা হবে। চিকিৎসা সেবার ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। এগুলো জনগণকে বুঝাতে হবে। : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা চেয়েছিলাম বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু এখন কি বলতে পারব আমরা নির্বাচন করব না? সরকার তো সেটাই চায়। তারা জানে নির্বাচনে লড়াই হলে জিততে পারবে না। এই জন্য সরকার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর আমরা যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চাই। : তিনি বলেন, এই সরকার কিন্তু মারাত্মক ধান্দাবাজ। চতুর। তারা বলছে- আসন্ন নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে পারবে কিন্তু তারা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। কোনো রিপোর্ট তারা বাইরে পাঠাতে পারবে না। : সরকারের উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আসন্ন নির্বাচন অনেক কঠিন। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে ফোরটুয়েন্টি মার্কা নির্বাচন হয়েছিল, তাতে যে ভারত সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছিল। তারাই এবার বলছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সঙ্গে ভারত থাকবে না। : তিনি বলেন, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার জন্য যে ২১ দিন সুযোগ পাব। তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশ চষে বেড়াব। আর জেলা পর্যায়ের নেতারা শুধু মানুষকে বোঝাবে। : মান্না বলেন, সরকার বলেছিল- ১৫ তারিখের পর কোনো বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু করেছে। এখনো গায়েবি মামলা দিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে জনগণের মধ্যে এই সরকারের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জমেছে। গত দুই-তিন মাস আগেও মনে হতো শেখ হাসিনার মতো এতো বুদ্ধিমতি দুনিয়াতে আর হয় না। কিন্তু এখন আর তা মনে হয় না মানুষের। সামনে আমরা এমন কৌশল নেব। এমন লড়াই করব। যে সরকার পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হবে। : তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য আমরা নিজের পথ তো পরিষ্কার করবোই। বেগম খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করব। নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কমিশন সরকারের ক্রীড়নক। দালাল। তারা নিজেরা স্বচ্ছ ব্যবস্থা তো করেই না। আমরা যখন অভিযোগ করি তখন বলে, দেখছি বিষয়টি। আবার পরদিন দেখা যায় আমাদের অভিযোগ পাশ কাটিয়ে তারা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। : কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বলেন, সরকার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মারজিনালাইজ করে ফেলেছে। কারণ তারা নিজেরা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা না। : প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি আওয়ামী লীগ নামক পুকুরে ডুবন্ত অবস্থায় আছেন। একটু শক্তি ব্যবহার করলেই আপনি শেষ। এ সময় তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনমুখী আছি। নির্বাচনমুখী থাকতে চাই। : জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের নঈম জাহাঙ্গীর, কর্নেল (অবঃ) মনির দেওয়ান প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নেতকর্মীসহ রণঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা।দিনকাল রিপোর্ট :