ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে হটাতে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান

0
143
Print Friendly, PDF & Email

মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি
সংশ্লিষ্ট খবর
‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বসে কারচুপির ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে হটাতে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এই আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন দলের জুলুম নির্যাতনে দেশবাসী দিশেহারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভিডিও কনফারেন্সে দলীয় প্রার্থীদের আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনকে বিপ্লবের দিনে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন শেষ চেষ্টা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আমরা শৃঙ্খলমুক্ত হলে ওই শৃঙ্খলকে ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা যদি আজকে মুক্তি চাই আমাদের সমস্ত অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হবে। এবং সেই অস্ত্র হচ্ছে আমাদের ভোটের অস্ত্র। সেটা দিয়েই জনগণের কাছে। আপনাকে প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে। জনগণের শক্তি দিয়ে দেয়াল করতে হবে, জনগণের শক্তি দিয়ে তাকে বাধ্য করতে হবে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব কঠিন সময়ে আছি। কিন্তু সেই কঠিন সময় অতিক্রম করতে হবে। আমাদের নেত্রী কারাগারে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, কারাগারে রয়েছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলামকে ৩ বছরের সাজা দিয়েছে। প্রতিটি জায়গায় নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার। এই অবস্থা থেকে কি আমরা মুক্তি পাবো না? পরিবর্তনের চেষ্টা করবো না? আমরা ১০ বছর চেষ্টা করেছি, এখন শেষ চেষ্টা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের দিনে ভোট দিতে যাই তাহলে কোনো শক্তি নেই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে। এজন্য সরকার প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। কথা দিয়েছিল আমাদের আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবে না। কিন্তু আবার গ্রেপ্তার করছে। ভয় দেখাচ্ছে। বিভিন্ন রকম কৌশল নিয়েছে। এমনকি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রিটও করেছে। কতো দেউলিয়া হলে একটা সরকার এগুলো করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের শক্তি নিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের বাঁচা-মরার অস্তিত্বের সংগ্রাম।

এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, পালিয়ে না বেড়িয়ে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে যান। জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসুন। তাহলেই আমরা জয়যুক্ত হবো। নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত জয়ের দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নেতা গত তিনদিন ধরে এ কথাই বলে যাচ্ছেন। আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সংগ্রাম করবো, লড়াই করবো। এটা আমার দেশ, সুন্দর একটি দেশ পেতে হলে আমাদের ত্যাগ শিকার করতে হবে। ত্যাগ শিকারের মধ্যে দিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের পরে এ দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে।

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ১০ বছর চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি দেখেছে। তারা এখন একটি দিনের অপেক্ষায়। তারা পরিবর্তন চায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, তারা দেখেছে। সকল পথে চলেছে। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে, কিন্তু তারা যখন পারেনি, তখন জনগণের রায়ের দিকে গেছে। নির্বাচনের মাধ্যমেই এই জালিম সরকারকে পরাজিত করবো। লন্ডন থেকে একজন মানুষ কথা বলে আর এখানের ক্ষমতাসীনরা ভয়ে কাপে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যাবে না, এটা আদায় করে নিতে হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন কামনা করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে আদায় হবে? একটা প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। যত অত্যাচার হোক, আরো যদি এক লাখ লোক গ্রেপ্তার হয় তবু আপনারা ভোটের ময়দান ছাড়বেন না। রাত্রিবেলা যদি আপনাকে নিয়ে যায়, আপনার মাকে গিয়া ভোটকেন্দ্রে আপনার পরিবর্তে দাঁড়াতে হবে, বোনকে দাঁড়াতে হবে, ভাইকে দাঁড়াতে হবে, স্ত্রীকে দাঁড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, প্রচারবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।

শেয়ার করুন