পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বসে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পুলিশি গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা অব্যাহত থাকার প্রোপটে আদৌ বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ করতে চায় কি না সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৬ সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ২৭৯ জনের সাাৎকার শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। : মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন আসলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপে নির্বাচন করতে চায় কি না সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরেও পুলিশ একইভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে এবং হয়রানি করছে। একইভাবে জামিনের জন্য যারা যাচ্ছেন এবং যারা জামিন পেয়েছেন তাদের জামিনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে এবং তাদেরকে জামিনে বের করছে না। তারা এ বিষয়ে কিছুই করছেন না, তারা তাদের কোনো দায়িত্ব পালন করছেন না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন যদি একটা সমতল ভূমি তৈরি না করে, পুলিশের এই গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধ না করে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ না করে তাহলে এই নির্বাচন জনগণের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। : পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেখেছি অতীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে তা ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা আবারো খবর পাচ্ছি বিশ্বস্ত সূত্রগুলোতে যে, পুলিশকে দিয়ে আবারো নির্বাচনে কারচুপি করার নীলনকশা তৈরি করা হচ্ছে। যে কর্মকর্তা পুলিশের সদর দফতরে বসে পরিকল্পনা করেছিলেন সেই একই পুলিশ কর্মকর্তা আবারো হেডকোয়ার্টার্সে বসে নীল নকশা তৈরি করছেন যে, কিভাবে নির্বাচনকে সরকার ও আওয়ামী লীগের পে নিয়ে আসতে হবে এবং কারচুপি করা যাবে। আমরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে পুলিশ সদর দফতর থেকে বদলি করে দেয়া অথবা কোজড করে দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, নির্বাচন কমিশন যাদের ওপর দায়িত্ব বর্তিয়েছে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবাধ নিরপে করার জন্যে, নির্বাচনের জন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য এর কোনোটাই তারা (ইসি) করছে না। আমি আশা করবো নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হবে, তারা জেগে উঠবে। সাংবিধানিকভাবে যে দায়িত্ব তাদের রয়েছে, মতা তাদের রয়েছে সেই মতা প্রয়োগ করে তারা তাদের কাজ করবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার দাবি আছে কি না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। এই বিষয়গুলো পুরোপুরিভাবে একটা সুষ্ঠু নিরপে নির্বাচনের বিপরীত অবস্থানে নিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নিজেই একটা অবস্থান নিয়ে নিয়েছেন যে, তারা এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করবেন না। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা কবে চূড়ান্ত হবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিগগিরই চূড়ান্ত হবে। : গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকালে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী-১ ও ফেনী-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একসঙ্গে সাাৎকারের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা আড়াইটায়। বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হয় সিলেট ও কুমিল্লা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাাৎকার। বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড এই সাাৎকার নিচ্ছেন। স্কাইপে বন্ধ থাকায় অন্য ভিডিও কল অ্যাপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই সাাৎকারে যুক্ত রয়েছেন। : চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জেলার ৩৬টি সংসদীয় আসন, কুমিল্লা বিভাগে ৩টি জেলার ২২টি আসন এবং সিলেট বিভাগে ৪টি জেলার ১৯টি আসনের জন্য প্রায় ছয় শতাধিক প্রার্থী এই সাাৎকারে অংশ নিচ্ছেন। পার্লামেন্টারি বোর্ডে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন। প্রথমদিন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, দ্বিতীয় দিন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাাৎকার শেষ হয়েছে। আজ বুধবার ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং ঢাকা বিভাগের সাাৎকার অনুষ্ঠিত হবে।দিনকাল রিপোর্ট :