মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অংশগ্রহণ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রবিবার বিকালে গুলশান কার্যালয়ে রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরুর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ কথা জানান। : তিনি বলেন, আমাদের দলের মধ্যে আমি কিভাবে সাক্ষাৎকার নেবো সেটাতে তাদের কোনো এখতিয়ার আছে বলে আমি মনে করি না। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নিজেই তো আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে তারা এখন পর্যন্ত পারেনি। : সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন ইচ্ছুক প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শুরু করেছে বিএনপি। এই সাক্ষাৎকারে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকছেন। দন্ডিত ব্যক্তি কিভাবে সাক্ষাৎকারে যুক্ত থাকেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, একজন দন্ডিত, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি দলীয় ফোরামে বক্তব্য রাখতে পারে কি না সেটা আমি জাতির কাছে বলব, জাতির কাছে এর বিচার চাইছি। আর এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। : এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কী করার আছে তা আলোচনা করে দেখা হবে। আপনারা বলেছেন, আমরা শুনেছি। এ ধরনের কোনো কিছু মনিটর করার মতো নিজস্ব কোনো ক্যাপাসিটি আমাদের নেই। যদি কেউ তথ্য-প্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আইনের মধ্যে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলব। আর আইনের মধ্যে যদি কিছু না থাকে, তাহলে আমরা কমিশনের সাথে বসে কী করতে পারি, তা পর্যালোচনা করে দেখে তারপর সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেব। : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের জন্য যে সমতল ভূমি ও লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড সেটা তৈরি হয়নি। নির্বাচনের যে ন্যূনতম পরিবেশ দরকার সেটা তৈরি করা হয়নি। আজকে বলা হচ্ছে মিডিয়া নিরপেক্ষ থাকবে। সকল দলের খবর সংগ্রহ ও প্রকাশ করবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। বিটিভি সমানে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের খবর বারবার প্রচার করছে, তারা কোনো নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না। সরকারি রেডিও অর্থাৎ বাংলাদেশে বেতার তারাও একই কাজ করছে। বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওগুলোকে সরকার চাপের মুখে রেখেছে, যাতে বিরোধী দলের সংবাদ প্রচার করা না হয়। গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ হয়নি, চলছেই। এসব সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই একটা সুষ্ঠু অবস্থা তৈরি হোক। সকল দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। মামলা-মোকাদ্দমা বন্ধ করে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের মাঠে থাকার সুযোগ করে দেয়া হোক। : বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের সবকিছু তারা প্রচার করে যাচ্ছে। বিরোধী দলের সংবাদ প্রচার করছে না। এটা অন্যায়, সুস্পষ্টভাবে আইনের লঙ্ঘন। বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে অভিহিত করবেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা কমিশনকে জানিয়েছি। আবারো জানাবো। : মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারে কী বার্তা দিচ্ছেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় তার চেষ্টা যেন তারা করেন। জয়ের জন্য যেন তারা নির্বাচন করেন। প্রত্যেকটা কেন্দ্রে যাতে কারচুপি করতে না পারে, আগের মতো কেন্দ্র দখল করতে না পারে সে জন্য নেতৃবৃন্দকে সজাগ ও সচেতন থাকার কথা বলছি। প্রথম দিন রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের জন্য ১৫৭ জন ও রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের জন্য ৩৬৮ জনের সাক্ষাৎকার নেয় বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।দিনকাল রিপোর্ট :