ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলের নেতারা কে কোন আসনে নির্বাচন করবেন?

0
137
Print Friendly, PDF & Email
ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলের নেতারা কে কোন আসনে নির্বাচন করবেন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এখন ২৩ দলীয় জোট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ছাড়াও রয়েছে আরও ৪টি দল। সেগুলো হচ্ছে- গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। তাই সবমিলিয়ে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বিএনপিকে ২৭টি দল নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল বিএনপির কাছ থেকে শতাধিক আসন তারা দাবি করেছে।

বিএনপি বলছে, জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে শরিক দলগুলোকে আসন ছাড়তে তাদের কোনও আপত্তি নেই। এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। কেউ কেউ একাধিক আসনেও নির্বাচনের কথা ভাবছেন।

গণফোরাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করবেন না বলে জানা গেছে। তবে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসতে পারেন তিনি। আইনি বাধ্যবাধকতায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে ড. কামাল হোসেন তার আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

তাছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডির আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন ড. কামাল।

ঢাকা-২ অথবা ঢাকা-৩ আসন থেকে নির্বাচন করবেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। ১৯৮৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-৩ এর সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে বিএনপির কাছে হেরে গিয়েছিলেন।

বিএনপির আমানউল্লাহ আমান ঢাকা-২ আসনের চারবারের এমপি। তিনি এবারও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকা-৩ থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ফলে মন্টু মনোনয়ন পাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

টাঙ্গাইলের দুই আসনে কাদের সিদ্দিকী: সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল–৮ এবং কালিহাতি এই দুটি আসনে নির্বাচন করতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

টাঙ্গাইল-৮ আসনে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ এবং ২০০১ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে সাংসদ হন কাদের সিদ্দিকী। ২০০৮ সালে নিজ দলের হয়ে লড়ে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে। এবার তিনি দুটি আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দুটি না পেলে টাঙ্গাইল-১ আসন তিনি হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

মান্নার আসন বগুড়া-২: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আসন নিয়ে সবচেয়ে সুবিধায় আছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বগুড়া-২ আসনে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনের পর এ আসনে আর কখনও নৌকা জেতেনি। ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না ১৯৯১ থেকে তিন বার এ আসনে নির্বাচন করেছেন। তবে প্রত্যেকবারই হেরেছেন তিনি।

চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম–১৪ আসনটি ২০০৮ এর আগে চট্টগ্রাম–১৩ আসন ছিল। এ আসনের চারবার এমপি নির্বাচিত হন সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ।
২০০৮ সালে এ দুটি আসন থেকেই প্রার্থী হন তিনি। আগামী নির্বাচনেও ২০ দলীয় জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে এ দুই আসনে তার প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা চলছে।

সূত্র বলছে, অলি আহমদ চট্টগ্রাম-১৩ থেকে লড়বেন। চট্টগ্রাম–১৪ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চাচ্ছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। এ এলাকায় জামায়াতেরও প্রার্থী আছে।

১৯৯১ ও ২০০১ সালে শাজাহান চৌধুরী এবং ২০০৮ সালে শামসুল ইসলাম জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। এবারও তারা দলের নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন কিনেছেন।

১৯৯৬ সালে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জয়ী হলেও ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কাছে হেরে যান তিনি। এবার ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে পারেন। জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন কুমিল্লা–৪ থেকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার–২ আসনে এবার ঐক্যফ্রন্টের হয়ে লড়তে পারেন সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে একবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি।

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম নির্বাচন করতে চান জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ থেকে। আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। দলীয় বিবাদে পরে যোগ দেন নাগরিক ঐক্যে। ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এ আসনে এবার প্রার্থী হতে চান তিনি। যদিও বিএনপির গত ৬ বারের প্রার্থী আবুল কালাম এবারও বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন।

এদিকে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল শতাধিক আসন দাবি করলেও তারা সর্বোচ্চ ৫০-৬০ আসন ছাড়তে পারেন। তবে উইনেবল প্রার্থী হলে ৭০টি আসন ছাড়তেও প্রস্তুত দলটি।

তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও জোটের একাধিক প্রার্থী হবার সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আপাতত সবাই নিজেকে গোছাচ্ছে। আসন বণ্টন নিয়ে প্রত্যেক দল ও জোটের সঙ্গে বসতে হবে। তারপর আমরা ঠিক করব, কী করবো।

শেয়ার করুন