শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুফিল্ম প্রত্যাহারের দাবি বিএনপির

0
137
Print Friendly, PDF & Email

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : রিজভী বলেন, একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি ন্যূনতম অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে পুরোপুরি নির্বিকার সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। আচরণ বিধিমালা ১৪ (২) ভঙ্গ করে শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’ ডকুমেন্টরি ফিল্মটি চারটি সিনেমা হলে গতকাল শুক্রবার মুক্তি দেয়া হয়েছে। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, মধুমিতা ছাড়াও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছবিটি। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে একজন প্রার্থী। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এককেন্দ্রীকভাকে উপস্থাপন করা হয়েছে-যা আচরণ বিধির চরম লঙ্ঘন। আচরণবিধিতে বলা আছে-এধরণের কোন কর্মকান্ড পরিচালনা করা যাবে না। এতে প্রচারণা শুরুর আগেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। নিজে প্রার্থী হয়ে নিজেই কিভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তা বোধগম্য নয়। : তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১২ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ পূর্বে কোন প্রকার প্রচার শুরু করা যাবে না। একই সঙ্গে বিধিমালার ১০ (ঙ) ধারানুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোন বক্তব্য দেয়া যাবে না। এই ডকুমেন্টরি ফিল্মটি কি প্রচারণামূলক নয় ? বিধিমালার ৭-এ পোস্টার ব্যহারের বিধি-নিষেধও আছে। সেখানে বলা আছে-সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর এলাকার কোথাও পোস্টার সাঁটানোর কোনো সুযোগ নেই। অথচ ডকুফিল্মটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অর্থাৎ সিনেমা হলগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টারসহ রীতিমতো মহড়া আকারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ধানমন্ডির সুধাসদনে অবস্থিত সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পক্ষে ডকুফিল্মটি প্রযোজনা করেছেন রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ঢাকঢোল পিটিয়ে এসব করা হলেও নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন ও রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত টিভি স্ক্রিনে শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড প্রচারণা চালানো হচ্ছে। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আচরণবিধি ভঙ্গের অসংখ্য প্রমাণ থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নীরব ভূমিকার কারণে নির্বাচনে ন্যূনতম লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। বরং আচরণবিধি লঙ্ঘন না করলেও পরিকল্পিতভাবে ঘটনা তৈরি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়-এসব কর্মকান্ড চলতে থাকলে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবিলম্বে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। কোনভাবেই নির্বাচনকালীন সময়ে এসব প্রচারণা চালানো যাবে না। পাশাপাশি গণভবনকেও নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন কেন এসব বিষয়ে দ্রুত আচরণবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের প্রতি নতজানু বলেই নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে কমিশন আগ্রহী নয়। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এমনকি আওয়ামী জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করছে। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় কার্যক্রম এখনও বাকি রয়েছে, তফসিল ঘোষণার সপ্তাহ পরে চলছে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগই দেয়া হয়নি। নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলবাজ কর্মকর্তারা বহাল আছেন, তাদের সরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন সাজানো হয়নি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে সাজানো হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি কমিশন, মানুষের মন থেকে ভীতি দূর করতে পারেনি। ভোট দেয়া দূরে থাক, মানুষ নির্ভয়ে মুখ খুলে কথা বলবে এমন পরিস্থিতিও দেশে নেই। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু এখনও বর্তমান সরকার বহাল আছে। একবার বলা হয় নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করা হবে, আবার বলা হয় এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার, অথচ নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নেই। সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার পরও আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যরা উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধনসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন লাভজনক পদে তারা এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোন আচরণবিধি এখনও তৈরি হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তারা যারা ডিসি পদ মর্যাদার লোক তারা কিভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে এ প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। তারা সর্বদা মন্ত্রী-এমপিদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে তা মোটেও সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও সহিংসতায় তফসিল ঘোষণার পর ৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অর্ধশত। কই দেখলাম না তো নির্বাচন কমিশনকে কোন ব্যবস্থা নিতে। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিন্দু পরিমাণ কোনো পরিবেশ নেই। এতসব ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন পিছিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা অত্যাবশ্যক। বন্ধুরা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়-একজন কমিশনারের মেয়ের বিয়ে, তাই ৩ জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন একমত হলে উক্ত কমিশনার বাধ সাধেন। এছাড়া জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বিশ^ ইজতেমা তাই নির্বাচন পেছানো যাবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশ^ ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। তাই বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানাচ্ছি। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ : চকবাজার থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাসেল গতকাল বেলা ৩ টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে তার পরিবার-পরিজন ও দলের নেতাকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনই তাকে আটক করেছে। আমি অবিলম্বে শফিকুল ইসলাম রাসেলকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। চট্টগ্রাম জেলা : রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক কুতুবউদ্দিন বাহার এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক কারাগার থেকে মুিক্তলাভের পরও তাদেরকে পুনরায় জেল গেট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কুষ্টিয়া জেলা : দৌলতপুর থানা যুবদল নেতা জমসেদকে কোনো মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কুমিল্লা জেলা : জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম এ আউয়াল খানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঝিনাইদহ জেলা : সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ দুই বছর থেকে থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুই বছরে তিনি বিএনপির ২০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গত দুই দিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে এবং টাকা আদায় করছে। : ছাত্রদল : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ারুল হক রয়েল, বর্তমান সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ আতিক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদল মহসিন হলের আহবায়ক মাহবুব মিয়া, জিয়া হল ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আবু সুফিয়ান, মশিউর, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদল সহ-সভাপতি সুরুজ মন্ডল, যুগ্ম-সম্পাদক আনিসুর রহমান সুমন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদল সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, নেত্রকোণা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ মুন্না, নেত্রকোণা জেলা ছাত্রদল সভাপতি ফরিদ এবং জেলা ছাত্রদল নেতা হোসেন বাবু, রাকিব, মান্নান ও পিংকুকে গত ১৪ নভেম্বর ২০১৮ সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই এখন পল্টন থানায় ৫ দিনের রিমান্ডে আছে। আমি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্য মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। পল্টন থানায় রিমান্ডে থাকা নেতাকর্মীদের রিমান্ড বাতিলসহ তাদেরও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, নাজমুল হক নান্নু, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত প্রমুখ।দিনকাল রিপোর্ট :

শেয়ার করুন