বিনা উস্কানিতে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থারত নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এ হামলা ওবায়দুল কাদেরদের ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ এখন জনবিচ্ছিন্ন, এজন্য তারা এ হামলা করছে। গত কিছুদিন আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল। তখন হেলমেট বাহিনীরা রাস্তার গাড়িতে হামলা করেছিল, আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। এই হেলমেট বাহিনীরা গাড়িতে হামলা করেছে, আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এই হেলমেটধারী কারা? এরাই হচ্ছে সরকারের এজেন্ট। নিজেরা গাড়িতে আগুন চালিয়ে বিএনপির উপর দোষ চাপায়। গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : রিজভী বলেন, প্রথমে এই হেলমেটধারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালায়। তারপর গলিতে রাখা সাংবাদিক এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের গাড়িতে আগুন জ্বালাতে আসে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমা দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন পর্যন্ত ৫০ জনের অধিক বিএনপির নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জানান, বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৭৭টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং জমা দেয়া হয়েছে ৩৩৭টি। : গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে কার্যালয়ের নিচে এসে বিুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে রিজভী বলেন, ইসির প্রত্য নির্দেশনায় পুলিশ হামলা চালিয়েছে, এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন দায়ী, তারা পুলিশকে ব্যবহার করেছে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে হ্যালমেট বাহিনী, যারা মতাসীনদের হয়ে কাজ করে। পঞ্চাশের অধিক নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন, কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এটা ওবায়দুল কাদের সাহেবদের কাজ। তিনি বলেন, পুলিশ বিনা উস্কানিতে আমাদের : ভাইদের গুলি করলো, তারা লাঠিচার্জ করলো, টিয়ার গ্যাস মেরে। এই যে শান্তিপূর্ণ প্রাণের মেলা যেটি বসেছিলো, সেই প্রাণের মেলার ওপর তারা আঘাত করে তারাই অশান্তি সৃষ্টি করলো। আমি মনে করি, এই আক্রমণ সরকারের নির্দেশেই হয়েছে, সরকারপ্রধানের নির্দেশে হয়েছে। এই আক্রমণের বিনিময়ে আমরা শান্তি নষ্ট করবো না। আমি বিনা উস্কানিতে পুলিশের এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি। : রিজভী বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মহাসচিব জানিয়েছেন, সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ফুটপাতে অবস্থান করবেন। কেউ রাস্তায় যাবেন না। রাস্তায় গাড়ি চলাচলে কোনো ধরনের বিঘœ না হয় তা দেখবেন। কেউ রাস্তায় হাঁটা চলাচল করবেন না। কেউ কোনো ফাঁদে পা দেবেন না। যতই উস্কানি দিক সরকারের লোকেরা পা দেবেন না। ফুটপাতে অবস্থান করে আপনারা আমাদের যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা দেয়ার কার্যক্রমে সহযোগিতা করুন। হিমালয় পর্বতের মতো আপনারা এখানে অবস্থান করবেন। : পুলিশের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যা করলেন। আপনারা মৌচাকে ঢিল মেরেছেন কেনো? আপনারা মনে করেন যে, আপনাদের গুলির ভয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তি মাটির নিচে ঢুকে যাবে। ঢুকে যাবে না। প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে মাটির ভেতর থেকে লাখ লাখ জাতীয়তাবাদী শক্তি বেরুবে। আপনারা লাঠিচার্জ করে, টিয়ারগ্যাস মেরে দমন করতে পারবেন না। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাবো আপনারা কারো অন্যায় নির্দেশে কাজ করবেন না। আপনারা এদেশের সন্তান, আমাদেরই আত্মীয়স্বজন আপনারা। কারো স্বার্থ রা করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ করবেন না যেটা শান্তি বিঘিœত হয়, গণতন্ত্রের বিপে যায়। এরপর নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিতে থাকে। এর পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের অতর্কিতে গুলিবর্ষণ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং ব্যাপক লাঠিচার্জে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। : আহতরা হলেন-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল নেতা মেহেদী হাসান নয়ন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক তানভীর আহমেদ খান ইকরাম, ঢাকা মহানগর মতিঝিল থানা যুবদল নেতা মকবুল, খিলগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোস্তাক, মুগদা থানা স্বেচ্ছাসেবক দল ৭১ নং ওয়ার্ড সভাপতি সবুজ, কলাবাগান থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন, মুগদা থানা যুবদল ৬নং ওয়ার্ড সভাপতি অরিন, শাহজাহানপুর ছাত্রদল নেতা মহিরুদ্দিন, হোসেন, ভাসান, টুটুল, শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা কামাল, পল্টন থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির, সবুজবাগ থানা যুবদলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মনির, ৪নং ওয়ার্ড সহ-প্রচার সম্পাদক সাইফুল, মুগদা থানা ৭২নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা মেহেদী হাসান মিরাজ, রমনা থানা ছাত্রদল নেতা প্রিন্স, ঢাকা পূর্ব মতিঝিল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মানিক, যুবদল নেতা হৃদয় শেখ, বিমানবন্দর থানা বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন রতন, গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়াকত আলী, ছাত্রদল সদস্য শামীম রেজা, নিক্সন, জাকারিয়া জিম, চাঁদপুর জেলা যুবদল নেতা দেওয়ান মোহাম্মদ জুয়েল, শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান, লাকসাম থানা ছাত্রদল নেতা নুরুন নবী মহসিন, নেছারাবাদ উপজেলা যুবদল নেতা শামসুল হক, পল্টন থানা শ্রমিক দল সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, খিলগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মনিরুজ্জামান, মহিলা দল নেত্রী হালিমা আক্তার বেবি, সালেহা ইসলামসহ ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ নির্বাচনের নমিনেশন ফরম কিনতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিতে পুলিশ কর্তৃক গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, জলকামানের গাড়ি এবং রাবার বুলেট ট্রাক উঠিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।দিনকাল রিপোর্ট :