বলে দিলেই হয় নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই : খালেদা জিয়া

0
196
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ ১১জনের বিরুদ্ধে নাইকো মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে আগামী ৩ জানুয়ারি। গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার : নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালত ৯-এর বিচারক মাহমুদুল কবির এ দিন ধার্য করেন। : আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, একদল নির্বাচন করবে আর আমরা আদালতে আসবো, এটা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, যেহেতু এখন সবাই মাঠে নির্বাচনের কাজ করছে, কেউ আমার জন্য, কেউ তার জন্য। যেখানে ইলেকশন নিয়ে সবাই ব্যস্ত, সেখানে আমাদের আদালতে আটকে রাখা হয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আমাদের এগুলো (নির্বাচনি কাজ) করতে হচ্ছে। তারপরও যদি আমাদের কোর্টের মধ্যেই আটকে রাখা হয়, তাহলে বলে দিক, নির্বাচন করো না। মামলার শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেয়ার আবেদন জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, যেহেতু সামনে নির্বাচন, সকলেই যে যার মতো এলাকায় চলে যাবে, কেউ আসতে পারবে না, আমি নিজেও আসতে পারবো না। এখানে আসা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। আপনি দেড় মাস সময় দেন, না হলে সম্ভব না। : বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের মামলাগুলো কেন দ্রুত বিচারে করা হচ্ছে। এর আগে কয়টা মামলায় দ্রুত বিচার হয়েছে? নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলায়ও দ্রুত বিচার হয়নি। কিসের জন্য আমাদের মামলা দ্রুত বিচার করা হয়? এছাড়া আদালতের পরিবেশ ও নিরাপত্তার কড়াকড়ি নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। : দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলকে উদ্দেশ্য করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আপনাকে তো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বানিয়ে দেয়া উচিত। তখন দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, ম্যাডাম আপনি দোয়া করবেন। : এর আগে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় ১১টা ৫৮ মিনিটে। এরপর বিচারক তার এজলাসে আসেন ১২টায়। তারপর এই মামলার আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পে শুনানি শুরু হয়। তখন মওদুদ আহমদ তার নিজের পে অভিযোগ গঠন শুনানি নিজেই করেন। বেগম খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করার পর বলেন, পুলিশ আদালতে সিকিউরিটি দেবে ঠিক আছে? কিন্তু আদালতের ভেতরে এত সিকিউরিটি দেয়ার কি আছে? আমি তো ল’ইয়ারকে দেখছি না। পুলিশ বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরে রাখায় তিনি তার আইনজীবীকে দেখতে না পেয়ে এই কথা বলেন। : আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম খান। মামলার আরেক অভিযুক্ত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজেই শুনানি করেন। : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, শুনানি উপলে বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষ না হওয়ায় আসামি পরে আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেেিত বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। : এর আগে গত ৮ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতে নেয়া হয়। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। পরে ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। গত বছরের ১৮ জুন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে বেগম খালেদা জিয়ার রিট আবেদন, এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নিম্ন আদালতকে বলেছেন উচ্চ আদালত। ওই সময় নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা দুটিও বিচারিক আদালতে চলবে বলে চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। : খালেদা জিয়ার রায়ের কপি হস্তান্তর : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়া ৭ বছরের কারাদন্ডাদেশের রায়ের সার্টিফায়েড কপি আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন রায়ের ৬৩২ পৃষ্ঠার সার্টিফায়েড কপি বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহর কাছে হস্তান্তর করেন। : বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ও রায়ের বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই উচ্চ আদালতে আবেদন করব।’ এর আগে ৩০ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। ২৯ অক্টোবর এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত। : রায়ে ৭ বছরের কারাদন্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ দেন আদালত। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই শাস্তির আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া কাকরাইলে সুরাইয়া খাতুনের নামে ট্রাস্টের জন্য কেনা ৪২ কাঠা জমি বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেয়ারও আদেশ দেন আদালত।দিনকাল রিপোর্ট :

শেয়ার করুন