ইসির নির্দেশ মানা হচ্ছে না, মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে : রিজভী

0
123
Print Friendly, PDF & Email

সরকারের কৌশলের অংশ হিসেবেই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ইসি নির্ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন এবং ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইট থাকায় বিদেশি পর্যবেকরা যাতে নির্বাচন পর্যবেণে না আসতে পারে সে কারণেই ৩০ ডিসেম্বরকে নির্বাচনের তারিখ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : রিজভী বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমতল নির্বাচনি মাঠ তৈরি করতে নির্বাচনের তারিখ ১ মাস পেছানোর দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন থেকে মাইনাস করার জন্যই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। জনপ্রিয়তার কারণেই তার প্রতি এত হিংসা। : তিনি বলেন, কারচুপি করার জন্যই ৮০-১০০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় সরকার। ইভিএম আওয়ামী লীগের কারচুপির মেশিন, এটা সরকারের চক্রান্তের অংশ। ইভিএম বন্ধ না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিরোধী দলের মতকে গুরুত্ব না দিয়ে ইসিকে দিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে সরকার। : রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতের নির্দেশে বিএসএমএমইউ (পিজি)-তে ভর্তি করে সরকারের নির্দেশে চিকিৎসা না দিয়েই আবারও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর কোনো চিকিৎসা চলছে না। নিয়মিত যে থেরাপি দেয়া হতো তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে, বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ। নির্দোষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার জন্যই কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এছাড়া আর কোনো কারণ নেই। এ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যতগুলো নির্বাচনে যত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সবগুলোতেই লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন, অনেকেই তা পারেননি, এজন্যই বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি এত প্রতিহিংসা। আমি এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। : তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের ছাড়া বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও জনমতকে উপেক্ষা করে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন সিইসি। কিন্তু দু দিন আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) সাহাদাত হোসেন ৮০ থেকে ১০০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন। যা আরও গভীর চক্রান্ত বলেই সকলেই বিশ^াস করছে। ইভিএম শুধু দেশে দেশে বিতর্কিতই নয়, ইভিএমে ভোট কারচুপি হয় বলেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতসহ যে দু-একটি দেশে যেখানে সীমিত আকারে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল সেখানেও জালিয়াতির কারণেই ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ঐসব দেশে রাজনৈতিক দলের নেতারা ইভিএমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ভোট কারচুপি ও ভোট ডাকাতির এই মেশিন আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার এই সিদ্ধান্ত আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতিরই মহাপরিকল্পনা। নির্বাচনে কোনো ইভিএম ব্যবহার করা চলবে না। ভোট ডাকাতির যন্ত্র ইভিএম ব্যবহারের এই মহাপরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন- ইভিএম সেন্টারে সেনাবাহিনী নিয়োগ থাকবে। তার এই বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইভিএম তো একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যা বহুদূর থেকে ম্যানিপুলেট করা যায়, তাহলে সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিয়ে কী লাভ? বরং ম্যানুয়ালি ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়া, জোর করে সীল মারতে গুন্ডামি হয়, সুতরাং গুন্ডামি-সন্ত্রাস ঠেকাতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। এজন্যই ক্ষমতাসীন দল ছাড়া দলমত নির্বিশেষে ৩০০ আসনে প্রতিটি সেন্টারে সেন্টারে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেয়া, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দায়ের করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, তল্লাশির নামে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখনও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যাতে না থাকতে পারে সেজন্য ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ভোটের দিন নির্ধারণ করেছে ইসি। ২৫ ডিসেম্বর বড় দিন, থার্টি ফার্স্ট ও ইংরেজি নর্ববর্ষের কারণে বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকবেন। সুতরাং তাদের দৃষ্টির অন্তরালেই একটি বড় ভোট চুরির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারের কৌশলী নির্দেশেই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে ইসি। আমাদের পূর্বের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন এক মাস পেছাতে হবে। পুনঃ তফসিল দিতে হবে। এছাড়াও নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারে সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। : বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর (উত্তর) জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করার পরও এখনও পর্যন্ত তাকের আটকের বিষয়টি স্বীকার করছে না। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এটি একটি পুরনো পদ্ধতি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক পারভেজকে আটক করা হলেও তাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকারের জন্য পারভেজের পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি অবিলম্বে পারভেজকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। : সিলেট জেলার বিশ^নাথপুর উপজেলাধীন ইউপি চেয়ারম্যান রুহেল ও তাহিদ মিয়া এবং ওসমানী নগর উপজেলা চেয়ারম্যান গয়েস মিয়াকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তরের মিরপুর মডেল থানা শাখার ছাত্রদল নেতা বদরুল আলম খান সৈকতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ থানাধীন ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও সাবেক কমিশনার মোঃ খাজা হাবিবকে গত ৯ নভেম্বর ২০১৮ রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভোলা জেলায় গত ১১ নভেম্বর মাগরিবের পর ভোলা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন করিব সোপানসহ ২৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চাঁদপুর জেলায় গত ১১ নভেম্বর বিকেলে মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি নেতা মোঃ দুলাল প্রধান এবং মহিউদ্দিন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাবনা জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নড়াইল জেলা যুবদল নেতা জুলফিকার, তরিকুল, বক্কর বিশ^াস, ইয়াদ আলীসহ ১১ জনকে গতকাল ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত ১১ নভেম্বর ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুরিশ। আমি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের অসত্য ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মো. মনির হোসেন প্রমুখ।দিনকাল রিপোর্ট :

শেয়ার করুন