ঢাকার মোহাম্মদপুরে গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের বলি হলো দুই কিশোর। মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই নেতার সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষের মধ্যে গাড়িচাপায় অকালে প্রাণ হারালো তারা। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদেক খানের সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ বাধে। : এ সময় মোহাম্মদিয়া হোমসের সামনে একটি পিকআপ তাড়া খেয়ে পালানোর সময় আরিফ (১৫) ও সুজন (১৭) নামে দুই কিশোরকে চাপা দিলে তারা নিহত হয়। এদের মধ্যে সুজন নির্মাণশ্রমিক এবং আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করত। এ ঘটনায় আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে যাওয়া মোহাম্মদপুর থানার এসআই মুকুল রঞ্জন দেব জানান, গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় ওই এলাকার মোহাম্মদিয়া হোমসের সামনে একটি পিকআপে করে বেশকিছু তরুণ লোহার গেটের কাছে আসে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে ওই পিকআপ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তাড়া খেয়ে পিকআপভ্যানটি দ্রুত ঘোরাতে গেলে তার নিচে চাপা পড়ে আরিফ ও সুজন। আরিফকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা দুজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ময়নাতদন্তের জন্য নিহত দুই কিশোরের লাশ হাসপাতাল দুটির মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। : পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ওই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘাতের ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদেক খানের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার জন্য ৎতার কর্মী-সমর্থকদের একটি গাড়িবহর মিছিল নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ের সামনে যায়। এ সময় নানকের সমর্থকরা বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। : নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের মোহাম্মদপুর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আরিফ ও সুজন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মিছিলে অংশ নিয়েছিল। আরিফ ও সুজনের বন্ধু নুরুল আমিন জানান, সুজন নবীনগর হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডে থাকে। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে সে। তার বাবার নাম রুহুল আমিন। নুরুল আমিন আরও জানান, সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নূর আলম তাদের একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার দাওয়াত দেন। এ জন্য তারা ১০-১২ জন তরুণ-কিশোর বন্ধু মিলে নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় যায়। সেখানে মিছিল করে একটি পিকআপ ভ্যানে ওঠে তারা। এর পরপরই কারা যেন পিকআপ ভ্যানে ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় পিকআপ থেকে সবাই তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করে। চালক পিকআপভ্যানটিও পেছনের দিকে চালাতে থাকেন। এ সময় কয়েকজন পড়ে গেলে পিকআপটি সুজন ও আরেক কিশোরের ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আরিফ মারা যায়। গুরুতর অবস্থায় সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সুজনের মৃত্যু হয়। : এদিকে নিহত আরিফের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আরিফ আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিল।’ ময়নাতদন্তের জন্য আরিফের লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করে। তার বাবার নাম মো. ফারুক হোসেন। ভোলা জেলার লালমোহনে গ্রামের বাড়ি। ঢাকার তুরাগ হাউজিংয়ের ঢাকা উদ্যান পানির পাম্পের পাশে তার বাসা। : সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোনিয়া আকতার বলেন, হাসপাতালে আরিফকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ছেলেটিকে যারা নিয়ে এসেছেন, তারা বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় সে আহত হয়েছে। মারামারির ঘটনায় আহত ১৬ জনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। : নিহত সুজন ও আরিফ আওয়ামী লীগের কর্মী জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান দাবি করেন, মাদক ব্যবসায়ীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বাধার কারণে দুজন মারা গেছে। এখানে জাহাঙ্গীর কবির নানকের লোকজন জড়িত ছিলেন না। আর ঘটনার সময় তিনি (সাদেক খান) ধানমন্ডি ৩ নম্বরে ছিলেন। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।দিনকাল রিপোর্ট