মনোনয়ন বিক্রির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র হত্যার উৎসব চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতেই ইসি যাবতীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংলাপ, নির্বাচন, তফসিল ঘোষণা সবই তামাশার নামান্তর মাত্র। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সবসময় উল্টো পথে হাঁটে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অর্থই হচ্ছে-স্বচ্ছ নির্বাচনি ব্যবস্থার বারোটা বেজে যাওয়া। সন্ত্রাসীদের দুর্গ আওয়ামী লীগ কখনোই প্রতিযোগিতামূলক অবাধ নির্বাচনে বিশ^াস করে না। নিজেদের স্বার্থে যখন যা ইচ্ছা তাই তারা করতে পারে। তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছে, আবার তারাই সংবিধান থেকে সেটি মুছে দিয়েছে। কোনো আধুনিক সভ্য রাজনৈতিক দল একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বখাটে আচরণ করতে পারে না। এই যে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা, এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়- সেই ব্যর্থ বাকশালে ফিরে যেতেই যতো আয়োজন করা হচ্ছে। সংলাপ, নির্বাচন, তফসিল ঘোষণা সবই তামাশার নামান্তর মাত্র। : তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতাসীনরা জনগণের দাবি মানছে না। ৭ দফা দাবিকে অগ্রাহ্য করেই একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যই বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা-গ্রেফতার-হত্যা-গুপ্তহত্যা-ক্রসফায়ারের মতো পৈশাচিক নির্মমতাকে কাজে লাগানো হয়েছে বিরোধী দল দমনে। ওরা জনগণকে ভয় পায় বলেই দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও বানোয়াট মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। বিবেকশূন্য সরকার ও সরকারপ্রধানের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়েই জরাজীর্ণ, পরিত্যক্ত ও বাসানুপযোগী নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাড়িঘরসহ তাঁর বেঁচে থাকার সমস্ত অবলম্বনকে কেড়ে নিয়ে, তাঁর চিকিৎসা পাবার অধিকারকে হরণ করেছে। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই নির্বাচনের বছরে অনুগত আদালতকে দিয়ে সাজা দিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। মামলায় আদালতে হাজিরাসহ বন্দিশালায় চালানো হচ্ছে নানামুখী নির্যাতন-নিপীড়ন। বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে বিনা কারণে নিপীড়ন করার জন্যই দেশের কারাগারগুলো এখন শেখ হাসিনার প্রতিশোধ গ্রহণের পার্সোনাল খোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাতেই নিম্ন আদালত পার্টি ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে উত্তাল আন্দোলনকে বিজয়ের পথে ধাবিত করবেই। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতেই নির্বাচন কমিশন যাবতীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। এইজন্য আগামী নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার বা নির্বাচনি মাঠ সমতল করার কোনো গরজ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেই। আর সেজন্যই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার স্বার্থে একতরফা নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করে কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণায় সারাদেশের ভোটারদের মুড-অফ, দেশের জনগণ হতাশ। প্রাণী হত্যা করার পর আদিম বন্য উৎসবের ন্যায় এখন গণতন্ত্র হত্যার উৎসব চলছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির মাধ্যমে। আসলে একতরফা তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশে বিষাদঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের নামে সরকারি প্রতারণায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতবাক। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি কিভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন! তিনি বলেছিলেন-নতুন মামলা দেয়া হবে না ও গ্রেফতার করা হবে না, যেদিন বলেছেন ঠিক সেই রাত থেকেই আরও বেশি মামলা ও গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এমনকি সিইসি তফসিল ঘোষণার সময় বলেছেন-বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি না করতে, রাজনৈতিক মামলা না দিতে, কিন্তু শুধুমাত্র গতকালই বিরোধী দলের ৩শ’র অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলাও। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। : তিনি আরো বলেন, কিছুক্ষণ পূর্বে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কালিহাতি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শুকুর মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত দুই দিনে ঝিনাইদহে ৩৮৫ জন, বগুড়ার শেরপুরে অর্ধশতাধিক, কুমিল্লায় ৬৩ জন, বরগুনার আমতলী, বামনা, পাথরঘাটা থেকে ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট থানার কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ৭, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গ্রেফতার হয়েছেন। মুন্সীগঞ্জে সিরাজদীখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন, মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রদল নেতা সাইদুল ইসলাম লাকীসহ ৪ জনকে গতরাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় এক সপ্তাহে প্রায় দেড় শতাধিক ও ফুলপুরে ৪৯ বিএনপির নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, গতকাল ধামরাইয়ে পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ধামরাই বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদসহ ৯১ জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়। আর মিথ্যা মামলায় পুলিশ ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গতকাল পর্যন্ত বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এরা হচ্ছে-সুতিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফটো মিয়া, সানোড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফি উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন, পৌর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ নাঈম, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কালামপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম কন্ঠু, পৌর ছাত্রদল নেতা শাহীন মাহমুদ, আবু তাহের, আনোয়ার হোসেনসহ ১২ জন। বরগুনার বামনা উপজেলার তিন বিএনপি নেতাকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করেছে বামনা থানা পুলিশ। বিএনপি নেতারা হলেন- উপজেলা বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. খোকন মিয়া, যুবদল নেতা কলাগাছিয়ার মো. জামাল আকন ও কাটাখালী নিবাসী যুবদল নেতা মো. জামাল হোসেন। এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা যায়। ভোলার চরফ্যাশন পৌর যবদল নেতা ফখরুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা ছাত্রদল নোত মোশারফ হোসেনকে গতরাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুবদলের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মদ ঝাড়– (৪৮)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকাল ৩টায় মৌলভীবাজার জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল গফুর (৪৬)কে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিরাইপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। কুষ্টিয়ায় মিথ্যা মামলায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদসহ ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদসহ মডেল থানায় দুইজন, মিরপুর থানায় চারজন, ভেড়ামারা থানায় তিনজন, খোকসা থানায় ছয়জন, দৌলতপুর থানায় পাঁচজন, কুমারখালী থানায় ১ জন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় চারজন। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিএনপি ও বিরোধী দলের ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটকরা হলেন- চান্দিনা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদল সহ-সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, বিরোধী দলের সমর্থক ওসমান আলীর ছেলে সফিকুল ইসলাম, ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দিন। বগুড়ার শেরপুরে মিথ্যা মামলায় বিএনপি ও বিরোধী দলের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শেরপুর পৌর যুবদলের সভাপতি মো. মঞ্জুরুল আলম বাপ্পী, যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন, তাইফুর রহমান পাভেল, মো. কাওসার, আল আমিন, আশিকুর রহমান আশিক, বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলী রাঙা,শহিদুল ইসলাম পাশা, ইয়াহিয়া, আব্দুল মুন্নাফ,আব্দুর রউফ বাচ্চু ফকিরও জামায়াত নেতা সামছুল হক, শাহাদত হোসেন। খুলনা নগরীজুড়ে পুলিশের গণগ্রেফতার অভিযানে নতুন করে গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আরো চার নেতাকর্মী। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আনিসুর রহমান, আবু হানিফ সুমন, শাহাজী কামাল টিপু ও মোজাম্মেল হোসেন। গত ৫ নভেম্বর ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ২৫০০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। : আমি বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও অসত্য মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এমবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন প্রমুখ। দিনকাল রিপোর্ট :