তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ

0
628
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় রাষ্ট্রীয় চক্রান্তে সাজা দেয়া এবং তড়িঘড়ি করে একতরফা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে গতকাল বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মিছিলে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় রাষ্ট্রীয় চক্রান্তে সাজা দেয়া এবং তড়িঘড়ি করে একতরফা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সোচ্চার কন্ঠে মিছিলে মুহুর্মুহু সে­াগান দেন। : হঠাৎ তফসিল ঘোষণা একতরফা নির্বাচনের ইঙ্গিত : আকস্মিকভাবে তফসিল ঘোষণা একতরফা নির্বাচনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে যাবেন না’ বলে প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও মহাজোটের নেতারা মুখস্থ কথাই আউড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজেরাই একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। মন্ত্রী ও অন্যান্য সাংবিধানিক পদধারীরা পদত্যাগপত্র জমা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী তো সাংবিধানিক কোনো পদে আসীন ব্যক্তি অথবা কোনো মন্ত্রী রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সাথে সাথে সেটি কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের মতো পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা বা না করার কোনো বিধান নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছিÑ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলেন, কিন্তু আবার দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক আওয়ামী কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি দন্ডিত হলেও তাদের মন্ত্রিত্ব ও এমপিত্ব বজায় থাকে! : কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে সুচিকিৎসার অধিকারকেও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আবারো একতরফা নির্বাচন করতে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে জোরপূর্বক কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। : গতকাল শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। : লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, কি অদ্ভুত ব্যাপার! বেগম জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়েনি। ছাড়পত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করানো হয়েছে পিজির চিকিৎসক নন এমন একজন শিক্ষার্থী-চিকিৎসক দিয়ে। এমনকি বেগম জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কারাগরে নেয়া হয়েছে তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তা জানেনও না। বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানামুখী চাপেরই এটি একটি অংশ। সরকার নিজ উদ্দেশ্যসাধনে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণের মাত্রা দিনকে দিন বৃদ্ধি করছে। সুতরাং চিকিৎসা শুরু না হতেই তড়িঘড়ি করে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারের প্রতিহিংসায় বেগম জিয়ার জীবন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। : তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করে শুধু সরকারের নির্দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছুই নেই। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারিহারে গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি তল্লাশির নামে বাড়িতে বাড়িতে তান্ডব চলছে। চারদিকে শুধু আতঙ্ক আর ভয়। দেশে আইন, বিচার সবই একজন ব্যক্তির হাতের মুঠোয় বলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। : নিম্ন আদালত সরকারের আজ্ঞাবাহী হওয়ার কারণে সারাদেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে প্রতিদিন হয় কোর্টের বারান্দায় না হয় কারাগারে থাকতে হচ্ছে। রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান না হওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানেরই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। অথচ সকল বিরোধী দলের দাবি ছিল মাঠ সমতল এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে তফসিল ঘোষণা। এমনকি পর্যাপ্ত সময়ও রয়েছে কমিশনের হাতে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে নির্বাচনের পিছিয়ে দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটতো না। : রিজভী বলেন, রাজশাহীতে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহী ও আশপাশের জেলায় চলেছে গ্রেফতার অভিযান। নেতাকর্মীরা যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারে সে জন্য শহরে ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে কম্বিং অভিযান চলেছে। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের বাসাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ হানা দিয়েছে। বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় পরিবহন ধর্মঘট করানো হয়েছে সুপরিকিল্পতভাবে। র‌্যাব, ডিবি ও পুলিশ হর্ন বাজিয়ে শহরজুড়ে মহড়া দিয়েছে, আতঙ্ক ছড়িয়ে শহরকে ফাঁকা করার জন্য। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী ক্যাডাররা মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে গিয়ে বাসচালকদের কাছ থেকে জোর করে গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের বিপরীত কর্মকান্ডই চলছে। : গতকাল সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের ভূমি সমতল থাকবে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি, সমাবেশে বাধা প্রদানকে কি সমতল ভূমি বলে? মূলত রাজনৈতিক ময়দান সম্পূর্ণভাবে সরকারের অনুকূলে সমতল রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত করছে নির্বাচন কমিশন। : তিনি বলেন, সময় অত্যাসন্ন, যে কারাগার অন্যের জন্য তৈরি করা হয় সেই কারাগারে নিজেদের ঢুকতে হয়, এটাকেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। নিজের খোড়া গর্তে নিজেদেরেই পড়তে হয়, এ বিষয়টি ভাবার জন্যও ক্ষমতাসীনদের অনুরোধ করছি। আসলে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগ একসাথে চলতে পারে না। অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তিসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিয়ে দেশের সঙ্কট সমাধান করুন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি মেনে নিন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও প্রচারে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করুন। : ঢাকাসহ দেশজুড়ে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গতকাল ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে অনুষ্ঠানের মাইকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ও সেখান থেকে যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা জিএস বাবুলসহ ১৮ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাপুলিশ ব্যাপকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তান্ডব চালাচ্ছে। : মহানগরীর কোতোয়ালি থানা বিএনপি সভাপতি হায়দার আলী বাবলা, বংশাল থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দেলোয়ার হোসেন স্বপন, বিএনপি নেতা ওয়াসিম এবং কোতোয়ালি থানা যুবদলের তানভীর আহমদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মিরপুর থানা বিএনপি নেতা ইয়াসিন ভান্ডারী, ময়না, দারুসসালাম থানা বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম, ইয়াসিন, হাসান, ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপি নেতা এহসানুল হক বাবু, দোলন, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি নেতা মো. শাকিল, মঈন, সাজু, সুজন ও সফিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মো. জুয়েল রানা, বিএনপির মো. আনসার আলী ও ছাত্রদল নেতা মো. সবুজসহ ৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানা বিএনপি নেতা মজিবুর রহমানকে গ্রামের বাড়িতে না যাওয়াসহ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যোগ না দিতে পুলিশ হুমকি দিয়েছে। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিএনপি নেতা আব্দুল হক আকন্দ, নূর ইসলাম, বিদ্যুৎ মাস্টার, আজহারুল ইসলাম এবং ছাত্রদল নেতা আজিম ও আরিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। : গত ৬ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা থেকে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থাÑ জাসাস সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শেরগুল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সুজন, জাসাস ঢাকা মহানগরীর আনোয়ার হোসেন আনু, সিদ্দিকুর রহমান হিটু, নিয়ামত উল্লাহ নিয়ামত এবং রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মিহির, মেজবাহ, ছাত্রদলের জিসান সরকার, বিএনপির করিম চেয়ারম্যান, এসএম আতিক, জামাল কাজী, হেলাল কাজী, বাকি, সায়েম কাজী, ফেরদৌস মোল্লা, শাহীন মিয়া, আবুল কালামসহ ২০ জন নেতাকর্মীকে ঢাকার আশকোনা এলাকা গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুবদলের মহিউদ্দিন ঝারুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। : হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা বিএনপি নেতা ডা. শফিকুর রহমান, শায়েস্তাগঞ্জের আবু তাহের, কৃষক দলের পলাশ আহমদ, বিএনপির শ্যামল ও উজ্জলকে গতকাল পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তান্ডব চালানো বন্ধেরও দাবি জানান রিজভী। : : দিনকাল রিপোর্ট :

শেয়ার করুন