খালেদা জিয়ার কারা বন্দিত্বের ৯ মাস – ছবি : সংগ্রহ
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে বন্দী জীবনের ৯ মাস পেরোলো আজ। পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দী রয়েছেন তিনি। তবে বন্দিদশার দীর্ঘ এ সময়ে শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা। এসব মামলার বেশির ভাগই তিনি জামিন পান। বেগম জিয়ার বন্দিদশা ঘোচাতে বিএনপির আইনজীবীরা আদালতের বারান্দায় হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু কোনো কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমেই তার মুক্তির পথ দেখছে বিএনপি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিশাল জনসভায় বক্তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন; অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পেতে পারেন তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না আইনজীবীরা। তবে আইনজীবী ও বিএনপির নেতাদের মতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। সরকারের শীর্ষ মহলের ইশারাতেই তিনি জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন না। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছাতেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে কারাবন্দী। আসলে দেশের জনপ্রিয় নেত্রীকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আবারো ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতেই সরকার বন্দী করেছে। ভেবেছে জাতীয়তাবাদী শক্তি তথা বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তা কোনো দিন সম্ভব নয়। দীর্ঘ দিন বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়া হয়নি, যা অমানবিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। আমরা বারবার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি, তাও সরকার গ্রাহ্য করেনি। আমরা বিশ্বাস করি সব বাধা অতিক্রম করে দেশনেত্রী আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দীর্ঘ এ সময়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই পালন করে আসছে বিএনপি। অহিংস কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে দলটি। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সাথে একাধিকবার দেখা করেছেন তার পরিবারের সদস্য ও বিএনপির নেতারা। নির্জন কারাগারে ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া একাধিবার অসুস্থ হন বলে তার পরিবার ও দলের অভিযোগ। বেগম জিয়া গত ৫ জুন কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন বলে জানায় বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে বা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করাতে সরকারের কাছে দাবিও জানায় দলটি। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার দেখাও করেন দলের সিনিয়র নেতারা। কিন্তু বিএনপির দাবিকে সরকার গুরুত্ব দেয়নি। তবে ৭ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর তাকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। তবে গতকাল তাকে ফের কারাগারে নেয়া হয়।
মঙ্গলবারের জনসভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। এ সরকার তাকে জেলে মারতে চায়। কিন্তু আমরা নিজেরা জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমরা তাকে জেলে মরতে দেবো না। তাকে মুক্ত করে আনব। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচনও হবে না।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। ওই দিনই তাকে নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনাসভা এবং প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে তার মুক্তির জন্য জনসভা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ১০ মাসেও দলের চেয়ারপারসন মুক্তি না পাওয়ায় আইনিপ্রক্রিয়ায় মুক্তির আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও এখন বলছেন, এ সরকার যত দিন মতায় আছে, তত দিন আইনিপ্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্ত হতে পারবেন না। তাকে মুক্ত করতে রাজপথে নামতে হবে। তাদের ভাষায়, যেহেতু রাজনৈতিক কারণে তিনি জেলে আছেন, তাই তাকে রাজনৈতিকভাবেই মুক্ত করতে হবে। কঠোর আন্দোলন করতে হবে। তা না হলে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।