আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ জনসভা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর আগে একই দাবিতে সিলেট ও চট্টগ্রামে জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় জনসভার অনুমতি চাইতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে যায় তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ। তারা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সভার অনুমতি চান। পরে ডিএমপির পক্ষ থেকে ঐক্যফ্রন্টকে জনসভার অনুমতি প্রদানের কথা জানান। এর আগে গত শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাত দফা দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে চায় বলে জানান। এদিকে জাতীয় নির্বাচন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গণভবনে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হলেও সংলাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে ৩ নভেম্বর ফের প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। নতুন জোটের সাত দফা দাবির মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে সংলাপ হয় ঐক্যফ্রন্টের। : এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল সমাবেশের মাঠ পরিদর্শন শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ হবে। আমাদের এই সমাবেশ আয়োজন করতে খুবই অল্প সময় পেয়েছি। কিন্তু তারপরেও জনগণের যে আকাক্সক্ষা, গণজাগরণ, সেই গণজাগরণের মধ্য দিয়ে ইদানিংকালের সর্ববৃহৎ একটি সমাবেশ হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেয়া যে ৭ দফা দাবি, সেই দাবি সামনে রেখে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই আজকের সমাবেশে উপস্থিত হবে। এই ৭ দফা যে জনগণের দাবি, জাতির দাবি, সেটা তারা তাদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রমাণ করবে। ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফায় যে সংলাপ হবে, এই সমাবেশ তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, সংলাপ এবং আজ মঙ্গলবার সমাবেশ একে অপরের পরিপূরক। আমরা আশা করি ৭ নভেম্বর সংলাপের মধ্য দিয়ে জনগণের দাবি পূরণ হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। যদি এই দাবিগুলো পূরণ না করা হয়, তাহলে অবশ্যই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সে দাবি আদায় করা হবে। : : সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করলে আলোচনা হবে : সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের : দিনকাল রিপোর্ট : দ্বিতীয় দফায় সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংবিধান অনুযায়ী যেসব যৌক্তিক প্রস্তাব করবে তা ভেবে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংবিধান অনুযায়ী যৌক্তিক যেসব দাবি জানাবে তা ভেবে দেখা হবে। সংবিধান অনুযায়ী যদি সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রস্তাব তারা করে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে। সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। আগামী ৭ নভেম্ব^র আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের পুনরায় সংলাপ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল ও জোটের সাথে সংলাপের সার সংক্ষেপ তৈরি করতে তিনজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট আজই নাম পাঠাবে। যেহেতু ছোট পরিসর, তালিকা ওরকমই হবে। সেটা দেখে আমাদেরটা ঠিক হবে। আলোচনার পরিসরও ছোট হবে কিনা তা এখনই বলা সম্ভব না। তবে কাল-পরশু দুই দফা করে আলোচনা অর্থাৎ দুই জোটের সাথে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গ উঠে আসলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তো এ বিষয়ে কিছু বলেনি। আর তাছাড়া প্যারোলে মুক্তি হয় সাধারণত কয়েক ঘন্টার জন্য। অথবা কোনো কারাবন্দি যদি অসুস্থ হন সেক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়।দিনকাল রিপোর্ট :