৭ দফার সমাধান পাইনি

0
138
Print Friendly, PDF & Email

সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন ॥ আলোচনায় সন্তুষ্ট হইনি : ফখরুল ॥ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে : আসম রব ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সভা-সমাবেশে বাধা থাকবে না : সুব্রত চৌধুরী ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের বিষয় ॥ অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি তবে আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না : কাদের : দিনকাল রিপোর্ট : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গতকাল রাতে সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি যে সংলাপে হয়েছে তাতে বিশেষ কোনো সমাধান পাইনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। রাতে বেইলি রোডের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়ে একটি লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা সাত দফা দাবি জানিয়েছি। এসব দাবি মানা না মানার এখতিয়ার সরকারের। আমরা মাঠে আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। : সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, রাজনৈতিক মামলা সম্পর্কে সরকার পক্ষ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে কোন বাধা দেয়া হবে না। তবে নির্দিষ্ট জায়গায় সমাবেশ করতে হবে, সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমাবেশ করা যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় সমাবেশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ফ্রি দিতে হবে। তালিকা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সারাদেশে কর্মসূচির পালনে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বাধা দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়। ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, আমরা সাড়ে তিন ঘণ্টা ছিলাম, সবাই নিজেদের মতো করে দাবি ও অভিযোগ তুলে ধরেছেন। সবার কথা শুনার পর প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। তবে বিশেষ কোন সমাধান আমরা পাইনি। : সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক কথায় তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন। জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, আলোচনা আশাপ্রদ হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আবারও বসা হবে। খালেদা জিয়ার বিষয়টি আইন-আলাদতের বিষয়। এটা আদালত দেখবেন। নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে, এ আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি নেতাদের মামলার বিষয়েও তালিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। নির্বাচনকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতার ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা করতে পারি না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি আদালতের ব্যাপার। তা আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে। এদিকে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা করতে পারি না। ৭ দফা সংবিধানসিদ্ধ নয়। : এর আগে সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দল এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টায় সংলাপ শেষ হয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টাব্যাপী এ সংলাপ চলে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও ড. মঈন খান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে সক্রিয় জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এসএম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিদ এবং শফিক উল্লাহ। : অন্যদিকে সংলাপে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন- ২৩ জন প্রতিনিধি, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলগুলোর নেতারাও ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মো. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল। : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবি তোলা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে ৭ টার সময় ব্যাংকোয়েট হলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে আসন গ্রহণ করেন। তিনি এই সংলাপে ক্ষমতাসীনদের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, গণভবন জনগণের ভবন, এখানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি, আজকে অনুষ্ঠানে যে আপনারা এসেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বহুল আলোচিত সংলাপের শুরুতেই আওয়ামী লীগের ১০ বছরের শাসনকালের মূল্যায়ন করে দেখতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমি এটার বিচার আপনাদের উপরই ছেড়ে দেব। (আমাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর) নয় বছর ১০ মাস হতে চলল আমরা সরকারে, এই সময়ের মধ্যে দেশের কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছি, সেটা নিশ্চয় আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। তবে এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। দিন বদলের যে সূচনা আমরা করেছিলাম, দিন বদল হচ্ছে এটাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

শেয়ার করুন