মানুষের হার্ট কত দ্রুত বা ধীরে চলছে তা নাড়ির গতি থেকে গণনা করা যায়। হার্টের প্রতিটি বিটে রক্তনালিতে রক্ত সঞ্চালন করার সময় কতটুকু পরিমাণ রক্ত রক্তনালিতে প্রেরণ করে, যার ফলে প্রতিবার পাম্পের সময় রক্তনালিতে চাপ বৃদ্ধি পায়- এই বর্ধিত চাপকে চিকিৎসার ভাষায় সিস্টোলিক রক্তচাপ বলা হয়।
হাইপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক ব্যাধি। যার কারণে মানুষের হার্ট, কিডনি ও ব্রেন নষ্ট হয়ে যায়, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমাসহ আরও অনেক অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। তবে উচ্চ রক্তচাপ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এসব অঙ্গহানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। মানুষের হার্ট বা হৃৎপিণ্ড প্রতিটি বিটে রক্ত পাম্প করে বড় বড় রক্তনালি প্রেরণ বা সঞ্চালন করে, যার ফলে প্রতিটি হার্ট-বিটের রক্তনালিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। রক্তনালিতে প্রতিটি বিটের ঢেউ প্রবাহিত হতে থাকে। চিকিৎসকরা হাতের কব্জিতে তা অনুভব করেন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ ঢেউকে পালস বলা হয়ে থাকে এবং সাধারণ মানুষ যাকে নাড়ি বলে থাকে। নাড়ির ঢেউকে গণনা করে হার্টের গতি নির্ণয় করা যায়। একজনের হার্ট কত ধীরে বা দ্রুত চলছে তা নাড়ির গতি থেকেই গণনা করা যায়। হার্টের প্রতিটি বিটে রক্তনালিতে রক্ত সঞ্চালন করার সময় কতটুকু পরিমাণ রক্ত রক্তনালিতে প্রেরণ করে, যার ফলে প্রতিবার পাম্পের সময় রক্তনালিতে চাপ বৃদ্ধি পায়- এই বর্ধিত চাপকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সিস্টোলিক রক্তচাপ বলা হয়। হার্ট থেকে প্রতিবিটে যে পরিমাণ রক্ত রক্তনালিতে সঞ্চালিত হয় তা খুব দ্রুত রক্তনালির শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে সারা শরীরে সরবরাহ হতে থাকে, ফলে বড় রক্তনালিতে রক্তের পরিমাণ কমতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে রক্তের চাপও কমতে থাকে। এই রক্তচাপ কমার পরবর্তী বিটের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে। রক্তচাপ কমার সর্বশেষ ধাপকে ডায়াস্টলিক ব্লাডপ্রেসার বলা হয়। এর জন্যই রক্তচাপের মাত্রাকে দুটি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়, একটি সর্বোচ্চ বা সিসটোলিক এবং অপরটি সর্বনিম্ন বা ডায়াস্টলিক রক্তচাপ।
রক্তচাপ নির্ণয়ের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যুক্তিযুক্ত। রক্তচাপ পরিমাপ করার আগে ৩০ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া জরুরি এবং এ সময়ে ধূমপান, মদ্যপান, চা, কফি ও অন্যান্য উত্তেজক বস্তু গ্রহণ করা যাবে না। রক্তচাপ যে বাহুতে নির্ণয় করবেন সে বাহুকে টেবিল বা অন্য কোনো বস্তুর ওপর স্থাপন করতে হবে, যাতে বাহুর মাংসপেশি সম্পূর্ণরূপে রিলাক্স থাকে। বাহু এবং হার্টকে একই উচ্চতায় রাখতে হবে তা না হলে রক্তচাপের তারতম্য ঘটতে পারে। যদি আপনার রক্তচাপ ১৪০/৯০ মি. মি পারদ বা তার ঊর্ধ্বে নির্ণিত হয় তবে ২/৩ দিন পর আবারও পরিমাপ করুন এবং অনুরূপভাবে আরও একবার অর্থাৎ তৃতীয়বার পরিমাপ করে যদি প্রতিবারই ১৪০/৯০ এর অধিক নির্ণিত হয় তবে আপনি হাইপ্রেসারে ভুগছেন এবং আপনাকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এ চিকিৎসা মানে সব সময় মেডিসিন সেবন করাকে বোঝায় না। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি জীবনধারা পরিবর্তন করে আপনার হাইপ্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেমন- কায়িক শ্রমের অভ্যাস না থাকলে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার পরিবর্তে সাঁতারকাটা বা সাইকেল চালানো যেতে পারে। খাদ্যের মাধ্যমে লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিন, আলগা লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করে দিন। লবণযুক্ত খাদ্য বস্তু যেমন- টক ফলের সঙ্গে লবণ খাওয়া, লবণযুক্ত আচার খাওয়া, নুনতা বিস্কুট, লবণইলিশ, ভর্তার সঙ্গে অত্যধিক লবণ গ্রহণ করা ইত্যাদি। আপনার শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে তা কমানোর চেষ্টা করুন। ধূমপান, মদ্যপান, পাতা জর্দা, গুল ও অত্যধিক পরিমাণ চা, কফি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। খাদ্যে পশুর চর্বি গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হোন, রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এসব কিছুর মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে প্রাকৃতিক চিকিৎসা বলা হয় এবং এ চিকিৎসা নিরাপদ ও কার্যকরি। তবে যারা এসব পদ্ধতির মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন তাদের অবশ্যই একজন সুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখবেন, যেভাবেই হোক আপনার রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তা না হলে আপনারই অঙ্গহানি ঘটবে।
৩০-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ পরিমাপ করুন। সকাল বেলা থেকে বিকালে রক্তচাপ কিছুটা বেশি থাকে।
ডা. এম শমশের আলী
কার্ডিওলজিস্ট
সিনিয়র কনসালট্যান্ট (প্রা.)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ।