সংলাপ হবে ৪ ইস্যুতে

0
137
Print Friendly, PDF & Email

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ হবে খোলামেলা পরিবেশেই। তবে এজেন্ডা থাকছে ৪টি। এগুলো হলো সংবিধান সংশোধন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সভা-সমাবেশে সমান অধিকার ও নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক। ঐক্যফ্রন্ট এই চার বিষয়ে আলোচনা চায়। তবে এসব বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনটি নির্বাচন কমিশন আবার কোনটি আইন-আদালতের এখতিয়ার।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, এ সংলাপ সরকারের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আলোচনায় নেতৃত্ব দিবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তারাও চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করতে। কারো আন্দোলন বা চাপের মুখে এই সংলাপ নয়। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখতেই আমরা সংলাপে সম্মত হয়েছি।

সংলাপের এজেন্ডা বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সভা-সমাবেশ তো করছেনই তারা। কিন্তু যখন সিডিউল (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল) ঘোষণা হবে, তখন সভা-সমাবেশে সমান অধিকারের বিষয়টি চলে যাবে একেবারেই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে। তিনি বলেন, তাদের আলোচনার তালিকায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আছে। দুয়েকটি বিষয় আছে যেগুলো আইন-আদালতের বিষয়। সংলাপ নিয়ে আমরা যা বলেছি, সেটা আমাদের সরকার ও দলের নীতিগত বিষয়। আর তারা তাদের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য নিয়ে তারা আলোচনা করতে চান। তাদের মোস্ট ওয়েলকাম। তাদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত হতে পারি। বাট ডিসাইড করবে নির্বাচন কমিশন। আরেকটি বিষয় আছে, সেটা হলো বিদেশি পর্যবেক্ষক। সেটা তো মেনে নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়।

ঐক্যফ্রন্ট নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে ফোন আলাপের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন পেপারে খবর এসেছে, আমরা নাকি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছি। এটা সত্য নয়। আমি বলেছি, ১৫ জন কেন, চাইলে আপনারা ২০-২৫ জনও আসতে পারেন। সংলাপে কোন পক্ষের কতজন থাকবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের কতজন থাকবেন, সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। ঐক্যফ্রন্ট তালিকা পাঠাবে। সেটা দেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর দলের তালিকা ঠিক করবেন।

ঐক্যফ্রন্টের কিছু দাবি সংবিধানসম্মত নয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা (ঐক্যফ্রন্ট) তাদের দাবিতে অটল থাকবে না সরে আসবে, দেখেন না কী হয়!’ তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের বাইরে এই মুহূর্তে অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংলাপের সুযোগ নেই। সংলাপে অংশ নিতে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের কাউকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সঙ্গে নেবে না বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।

ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার দলেরও নিবন্ধন নেই-স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (ড. কামাল) কাকে সঙ্গে আনবেন না আনবেন তা তার হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খোলামেলা পরিবেশেই আলাপ-আলোচনা হবে, তা না হলে তো আমরা ডিনারের ব্যবস্থা করতাম না। সংলাপকে ‘জাস্ট লাইভ সারপ্রাইজ’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংলাপ হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। এই জোটের প্রধান হিসেবে আমরা ড. কামালের নাম জানি। তবে আমরা শিওর নই, তিনিই এই জোটের প্রধান নাকি লন্ডনে এর নেতা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরদিন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দলীয় শীর্ষ নেতাদের অনির্ধারিত এক বৈঠকে সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার চিঠি ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের বাসায় পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ।

প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্রে লেখা রয়েছে, ‘সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

শেয়ার করুন