খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট

0
212
Print Friendly, PDF & Email

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলার অন্য আসামিদের ১০ বছরের সাজা বহাল রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছর কারাদন্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিল, অন্য আসামিদের আপিল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাজা বৃদ্ধির আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সোমবার রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন আদালত। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদন্ডপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তিতে সময় বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। : আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জনের ঘোষণা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদন্ড বাড়ানোর প্রতিবাদে আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়াও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাবো। আশা করি, তিনি (খালেদা জিয়া) ন্যায়বিচার পাবেন। : রায়ের সময় ছিলেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বেগম খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায় দেওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপরে আইনজীবীরা হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অনাস্থা জানিয়ে আদালত বর্জন করেন। এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হলেও তাঁর আইনজীবীরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াও জানাননি। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিলের শুনানি হওয়া হাইকোর্ট বেঞ্চের ওপর অনাস্থা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পে করা আবেদন গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ অনাস্থা আবেদন গ্রহণ না করে তা খারিজের আদেশ দেন। আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার ওই আবেদনের পে শুনানি করেন তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মীর হেলাল, বদরুদ্দোজা বাদল ও নওশাদ জমির প্রমুখ। আপিল বিভাগে শুনানিকালে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বেঞ্চের (বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান) প্রতি অনাস্থা জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা প্রোপার ওয়েতে (চেম্বার আদালত হয়ে তারপর আপিল বিভাগে) আসেন। তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এমন অনেক নজির (চেম্বার আদালত না হয়ে সরাসরি আপিল বিভাগে আসার) আছে। আগেও এসেছি। তবে এরপরও বেগম খালেদা জিয়ার অনাস্থা আবেদন গ্রহণ না করে তা ফিরিয়ে দেন আপিল বিভাগ। : পরে আদালত থেকে বেরিয়ে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আপিল বিভাগে একটি আবেদন (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎস নিয়ে অধিকতর স্যা চেয়ে আবেদন) নিয়ে গিয়েছিলাম। যদিও আদালত আবেদন সরাসরি খারিজ না করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এ সময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে আমাদের আবেদনটি আজকের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেন। আমরা ভেবেছি যে হাইকোর্ট আবেদনটি শুনে আজকে আদেশ দেবেন। কিন্তু হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখলাম, মামলাটি আজ হাইকোর্টে (বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে) রায়ের জন্য আছে। আমরা এ অবস্থায় বুঝতেই পারলাম না যে, আমাদের সেই আবেদনের (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎস নিয়ে অধিকতর স্যা চেয়ে আবেদন) আদেশ কী হলো? এতে আমরা বুঝতে পারলাম, হাইকোর্ট একতরফাভাবে সব করে যাচ্ছে। আমরা এ জন্য সংুব্ধ হয়ে আপিল বিভাগে আজ আবেদন করে বলেছি, যেহেতু এই হাইকোর্ট আপনাদের আদেশ পালন না করেই মামলাটি রায়ের জন্য রেখেছে তাই আমরা মনে করি আপিল বিভাগে যথার্থ বিচার পাব। এই কথা বলে আমরা একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। জয়নুল আবেদীন বলেন, এ জে মোহাম্মদ আলী আবেদনটি আপিল বিভাগে উপস্থাপনের চেষ্টা করে আদালতকে বলেছেন, অতীতেও এমন নজির (হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন) আছে। তারপরও আপিল বিভাগ আমাদের আবেদনটি নেননি। এখানেও আমাদের একটি ব্যথা। আমাদের সব জায়গাতেই ব্যথা। এখানেও আমরা বিচার পাইনি। : এদিকে সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন আদালত। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই দন্ড দিয়েছেন আদালত। এর আগে গত ৯ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার আপিল গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর গত ৩১ জুলাই বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আরেক আবেদনের পরিপ্রেেিত সে সময় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে আরো সময় চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন জানালে সোমবার (২৯ অক্টোবর) তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। : গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারত মো. আখতারুজ্জামান। রায়ের পর ওই দিনই বেগম খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদন্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পরে ২৮ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। গতকাল তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের ওপর রায় ঘোষণা হয়। : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। :দিনকাল রিপোর্ট :

শেয়ার করুন