চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতারা। ছবি : কালের কণ্ঠ
অ- অ অ+
বর্তমান সরকার ২০১৪ সাল থেকে বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত যতবার সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে, প্রতিদিন জনগণের সঙ্গে যে অপরাধ করা হচ্ছে এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। বারবার সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি আপনাদের পেতে হবে। কারণ সংবিধানে লেখা আছে, জনগণ দেশের মালিক। এখন এই (আওয়ামী লীগ) সরকার দেশের মালিক সেজে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শপথ ভঙ্গ করে চলছে বর্তমান সরকার।’
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. কামাল এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে নিয়ে গড়া এই জোটের আহ্বায়ক আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সভা করতে চাইলে সভার অনুমতি নিয়ে, সভার স্থান নিয়ে টালবাহানা করছে সরকার। সিলেটে করেছে, চট্টগ্রামেও করেছে। জনসভা করা, কথা বলা জনগণের মৌলিক অধিকার। কিন্তু সরকার এই অধিকার হরণ করে চলছে প্রতিনিয়ত।
১০ মিনিটের বক্তৃতায় ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাত দফা দিয়েছি। সাত দফার মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে।’ সময় থাকতে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নগরীর কাজির দেউড়ি নুর আহমদ সড়কের চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বক্তা ছিলেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আব্দুল্লাহ আল নোমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যর সদস্যসচিব মোস্তফা আমীন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনসহ ঐক্যফ্রন্টের আরো বেশ কয়েকজন নেতা।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বাধা সৃষ্টি এবং বানচাল করার জন্য পুলিশকে দিয়ে নানা টালবাহানা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘সমাবেশের তিন দিন আগে থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশ হানা দিয়েছে। লালদীঘির পারে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই সমাবেশ করার জন্য ২৫টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত মাইক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি।’
বর্তমান সরকার দেশজুড়ে সন্ত্রাস, নাশকতা সৃষ্টি করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দায়ী করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকারের কবল থেকে মানুষের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারে দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, দেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এই বৃদ্ধ বয়সে মাঠে নেমেছেন। সাত দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘সরকারি প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিউট্রাল হয়ে যাচ্ছেন। আপনারা পালাতে পারবেন না। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে পার পাবেন না। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলাপ না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে পরবর্তী পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে।’
বিএনপি নেতা ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান।
সরকার পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়ে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে দাবি করে মওদুদ আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বসী নেতারাই আজ জাতীয় ঐক্যের নেতা।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এত দিন অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন, দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাত্র ১০টি দিন মাঠে থাকবেন, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’
নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের সাত দফা মেনে নিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারকে টেনে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে।
সমাবেশে ঐক্যফ্রন্টের সব নেতা কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছেন।
সবার হাতে খালেদা-তারেকের ছবি, দেখা মেলেনি ফ্রন্ট নেতাদের ছবি
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় আগত নেতাকর্মীদের হাতে ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। ফ্রন্টের শরিক অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীরা জনসভায় অংশ নিলেও তাদের কারো হাতে ড. কামাল হোসেন বা অন্য কোনো নেতার ছবিসংবলিত ব্যানার-পোস্টার চোখে পড়েনি।
তিন দিকে রাস্তা বন্ধ
যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না—এমন শর্তসাপেক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জনসভা করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। তার পরও দুপুর ১২টা থেকে নগরের নুর আহম্মদ সড়কে জনসভাস্থলে আগত মানুষের চাপ বাড়ায় কাজির দেউড়ি মোড়, লাভ লেন মোড় ও নেভাল এভিনিউ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
মাইকের ব্যবহার ছিল সীমিত
জনসভা শুরুর আগে নুর আহম্মদ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মাইক বাঁধতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মঞ্চের আশপাশে শুধু ১০টি মাইক বাঁধতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। নগর বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক মো. ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাভ লেন থেকে কাজির দেউড়ি মোড়, আলমাস সিনেমা হলের মোড়, নেভাল এভিনিউ এবং স্টেডিয়ামের আশপাশে ৫০ থেকে ৬০টি মাইক লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে তা আমরা পারিনি।’
মাজার জিয়ারত করলেন কেন্দ্রীয় নেতারা
চট্টগ্রাম পৌঁছার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে নগরের জেল রোডের শাহ আমানত (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা।