চলমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই : গোলটেবিলে বক্তারা

0
294
Print Friendly, PDF & Email

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, নির্ভেজাল গণতন্ত্রের সূত্র হচ্ছে ফেয়ার নির্বাচন। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমি যা দেখছি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দি ঢাকা ফোরাম’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে আমি কোনো আশার আলো দেখতে পারছি না। ইসির অনেক জটিল কাজ ছিল কিন্তু তা বাদ দিয়ে তারা ইভিএম-এর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এটা সন্দেহজনক। এই ইসির অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাহসী পদক্ষেপ ইসিকে নিতে হবে। : হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, নির্ভেজাল গণতন্ত্রের সূত্র হচ্ছে ফেয়ার নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে সরকার হাঁটছে না। সরকার যদি সত্যি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় তাহলে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, তাছাড়া সম্ভব নয়। : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ১৯৯১ সালে মানুষ যেভাবে আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল, আমি চাই ২০১৮ সালে যেন সেভাবে ভোটারধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আর এই ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছু দুর্বল হয়ে গেছে। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, ২০১৮ সালে যদি মানুষ ভোট দিতে না পারে তাহলে একটা তরুণ তার যৌবন শেষ হয়ে যাবে অথচ ভোট দিতে পারবে না। একটি সরকার জনগণের ভোটের মাধ্যমে আসলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি তাই জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নেই। একের পর এক আইন বানিয়ে চলছে। : তিনি বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন চাচ্ছে। নিজেরা নির্বাচনের জন্য প্রচারণা করছে কিন্তু অন্য দলকে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে না। এর মানে দাঁড়ায় খেলার আগে হাত-পা ভেঙে দিয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করতে বলা হচ্ছে। : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, ফেসবুকে যেখানে কমেন্ট করার জন্য মানুষ গুম হয় তখন বুঝার উপায় থাকে না, মানুষ কতটা উদ্বেগে আছে। অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। : মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কূটনীতিক এম সিরাজুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ সমগ্র জাতি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত। গণমানুষের এ আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার বিষয়ে অনড়। অর্থাৎ দলীয় নেত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে বহাল রাখতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সরকারি দল ইতিমধ্যে এই লক্ষ্যে পুলিশ ও জনপ্রশাসন বিভাগের রাজনীতিকরণ সম্পন্ন করেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে। যদি এটি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এমন আশঙ্কা অমূলক নয় যে গায়েবি, মিথ্যা মামলা, গুম আর অপহরণের মতো বিষয়গুলো আরও প্রকটতর হবে। : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, দুটি বিষয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে আশান্বিত করেছে। প্রথমটি হলো, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতসহ অন্যান্য দেশ ও সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। দেশজ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অনুসৃত বিরোধী বৃত্তের বাইরে তৃতীয় একটি শক্তির উত্থান হয়েছে। এই শক্তিটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য কাজ করছে। এই মোর্চাটি আওয়ামী লীগের ২০০৯ ও ২০১৪ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে সরকারি প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। এটি বেগম জিয়ার জামিন সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার নির্বাচনি ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনার অপচেষ্টা মাত্র। : লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সে সময়ে, আওয়ামী লীগের দেয়া যুক্তি বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেয়া মানে ‘তথাকথিত’ ইসলামী সন্ত্রাসকে উসকে দেয়া যা আন্তর্জাতিক বিশ্ব অনেকটা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতি আজ নেই। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক সফরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশে প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার ও অন্যান্য কিছু সাংবাদিক ও কূটনীতিক একই মত ব্যক্ত করে গেছেন। বর্তমান হাইকমিশনারও একাধিকবার একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। : গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত, গণতান্ত্রিক বিশ্বে বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোয় পূর্বতন সংসদ বজায় রেখে ওইসব সংসদ সদস্য দিয়েই নির্বাচন করার কোনো নজির নেই। এটি এক ধরনের স্বেচ্ছাচারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এখন প্রয়োজন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেয়া। তাই সকলের প্রত্যাশা প্রধান রাজনৈতিক দলের উচিত আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া। তা না হলে জাতি গভীর অন্ধকারে নিপতিত হতে পারে, যা মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের রক্তের প্রতি অবমাননা করা হবে। : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক ও জাপার এমপি ফখরুল ইমাম। বৈঠকে সাবেক কূটনীতিকদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন এফ এ শামীম আহমেদ, মাহমুদুর রেজা চৌধুরী, ইফতেখারুল করিম, মাসুদ আজিজ, শাহেদ আখতার প্রমুখ।দিনকাল রিপোর্ট

শেয়ার করুন