ধামরাইয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দিনদিন এখন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নানাভাবে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। উল্টো আসল অপরাধীদের আড়াল করতে বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত দিন মজুরদের ধরে নিয়ে গিয়ে শাস্তি দিয়েছে প্রশাসন। সমাজের অনেকে মনে করেন, প্রশাসন এ ক্ষেত্রে আন্তরিক হলেই কেবল অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে ওই কাজে জড়িত মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
জানা গেছে, অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গুচ্ছগ্রাম, সেতু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বালু উত্তোলনের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে এদের মধ্যে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটছে। ছয় বছর আগে তিনটি বালু মহাল সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় সোমভাগ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানকে ইজারাদারের লোকেরা মারপিট করে। এদিকে ওই সময় টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে একজনকে ছুরিকাঘাত করে নারি-ভুরি বের করে দেয় অংশীদাররা। এসব ঘটনার পর থেকে জেলা প্রশাসক ইজারা দেওয়া বন্ধ করে দেন। তাতে বরং লাভ হয়েছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের। ইজারা দেওয়া বন্ধ রয়েছে ঠিকই কিন্তু বন্ধ নেই বালু উত্তোলনের। বংশী নদী রক্ষা পাচ্ছে না অবৈধ সিন্ডিকেটের হাত থেকে। সরকারি বালু লুট হচ্ছে ঠিকই কিন্তু রাজস্ব হারাছে সরকার। এর ফলে ইজারা দিলে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বংশী নদীর প্রায় ৩০টি পয়েন্টে মিনি ড্রেজার লাগিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে সরকার দলীয় লোকজন। লোক দেখানোর অভিযান চালিয়ে উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত পাইপ নষ্ট করা হয়। কিন্তু কোনও মামলা দেওয়া হয় না মূল হোতাদের বিরুদ্ধে। ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায় মূল হোতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বংশী নদীর চান্দখালী, সুইচখালী, মহিশাষী,টোপের বাড়ী,হাটকুশুরা, কুনি কুশুরা, পানকাত্তা,পাড়াগ্রাম শাসন, নরসিংহপুর, আমছিমুর, বাস্তা, টেটাইল ,বালিয়া, চৌহাট,আগজেঠাইল,কাচা রাজাপুর, ভাকুলিয়াসহ বহু পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, মিনি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কুশুরা, গাওতারা ও চৌহাটের তিনটি সেতু। হুমকিতে রয়েছে টোপেরবাড়ীর গুচ্ছগ্রাম। বিলীন হয়েছে ফসলি জমি।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী আমতা ইউনিয়নের জেঠাইল গ্রামের কুলুপাড়ার আলমগীর হোসেন বলেন, স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আলমগীরের অভিযোগ অস্বীকার করে বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, পারলে আপনারা আমাকে বদলি করে দেন। কোথায় কে বালু উত্তোলন করছে তা আমি জানি না। তবে শুনেছি আলমগীর নামের এক ব্যক্তি বালু উত্তোলন করছে।
এদিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, মজিবুর রহমান যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করে ওই সড়কের পাশেই বংশী নদী। ওই নদী থেকে আলমগীর ও বালিয়া গ্রামের নাছির নামের এক জামাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সড়কের পাশেই বালুর স্তুপ করা হচ্ছে। এরপর ট্রাকে বালু ভরে বিক্রি করছে। এরপরও নাকি মজিবুর রহমান কিছুই জানে না।
অপরদিকে কুশুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ৫০০ গজ পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে বছরের পর বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে আরেক আলমগীর হোসেন। এর পরও অদৃশ্য কারণে বন্ধের কোনও উদ্যোগ নেই তহসিল অফিসের।
এলাকাবাসী জানায়, এসব পয়েন্টে একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দাপটে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
জানা গেছে, বালু উত্তোলনকারীরা সবাই সরকার দলীয় লোক।
বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আহম্মদ হোসেন বলেন, অবৈধ ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ধংস করা হচ্ছে। এর পরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামানো যাচ্ছে না। ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি