মৃত বাকশালকে জীবিত করতেই কালো আইন পাসের হিড়িক : রিজভী

0
164
Print Friendly, PDF & Email

: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নিরঙ্কুশ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই এ গণবিরোধী খারাপ আইনগুলো পাস করিয়েছেন বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জাতীয় সংসদের বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা কালাকানুন পাসের হিড়িক চলছে। এসব কালো আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ভিন্ন কায়দায়, ভিন্ন পন্থায় মৃত বাকশালকে জীবিত করতে অমৃত পান করানো হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদে বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা কালা কানুন পাসের হিড়িক চলছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদে ভোটারবিহীন সংসদ সদস্যদের এখন পর্যন্ত ২৩টি অধিবেশন বসেছে। এর মধ্যে প্রায় দুই শ আইন পাস করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নিরঙ্কুশ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই এ গণবিরোধী খারাপ আইনগুলো পাস করিয়েছেন। অষ্টাদশ শতকের প্রখ্যাত ব্রিটিশ পার্লামেন্টিরিয়ান, বাগ্মি, তাত্ত্বিক এডমন্ড বার্ক বলেছেন, নধফ ষধংি ধৎব ঃযব ড়িৎংঃ ংড়ৎঃং ড়ভ ঃুৎধহু, আসলেই কালো আইন জনগণের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচারের ন্যায়। গত অধিবেশনেও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৮টি আইন পাস করা হয়েছে। চলতি অধিবেশনেও চলছে নতুন নতুন আইন পাসের তোড়জোড়। মানুষ এখন নিজের ছায়াকে দেখলেই ভয় পায়। ঘুমের ঘোরের কথাতেও আঁতকে ওঠে। আজকে গণমাধ্যমে এসেছে আরও আইন পাসের জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দেশের রাজনীতিসহ গোটাদেশকে কব্জায় নিতে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী এত কালো আইন পাস করে রেকর্ড গড়তে চলেছেন। তাই তিনি নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব তুলেছেন, যা চলতি সংসদে পাস করতে তোড়তোড় চলছে। এর পিছনে যে চূড়ান্ত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা জাতির সামনে পরিষ্কার। বন্ধুরা, শেখ হাসিনা পিতার সৃষ্টি বাকশালকে ব্যর্থ হতে দিতে চান না। তাই ভিন্ন কায়দায়, ভিন্ন পন্থায় মৃত বাকশালকে জীবিত করতে অমৃতপান করানো হচ্ছে এ সমস্ত কালো আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। আইনের মারপ্যাঁচে মূলত তিনি দেশে একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছেন। একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া দেশে অন্য কারও নেতৃত্ব থাকবে সেটা তিনি মানতে পারছেন না। সংসদে বিরোধী দলও থাকবে তবে সেটি হবে গৃহপালিত, শেখ হাসিনার আদরের ধন। : তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় আছেন ততদিন গণবিরোধী কাজের সমালোচনাও করা যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, ব্যাংক লুটের কথা বলা যাবে না, অপকর্মের কথা বলা যাবে না, গুম ও গুপ্ত হত্যার কথা বলা যাবে না। গত দুদিন আগে তিনি বলেছেন, ৪০টি টেলিভিশন আমি দিয়েছি অথচ তাদের দিয়ে সবচেয়ে ভুক্তভোগী আমরা। বিশ্ব যেখানে এগিয়ে চলছে সেখানে গণমাধ্যম এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি কি গণমাধ্যম দেয়াকে ব্যক্তিগত সম্পদ দেয়ার মতো মনে করছেন যে, তিনি তার নিজস্ব গোডাউন থেকে টেলিভিশন চ্যানেল সরবরাহ করেছেন। অর্থাৎ তিনি টেলিভিশন দিয়েছেন দলীয় চেতনার মানুষদের শুধুমাত্র তার গুনগান করার জন্য। সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রম হলেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। এটিই হচ্ছে গণতন্ত্র বিরোধী বাকশালী চেতনা। কিন্তু এ বিশ্বায়নের যুগেতো কোনো অপকর্ম, অপকীর্তি ঢেকে রাখা যাবে না। এখন নর্থপোল থেকে সাউথপোলের খবর এক কিকেই সব জানা যায়। তাই যতই কালাকানুন করুন না কেন, মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এ তথ্যপ্রযুক্তির উৎর্কষতার যুগে অনিয়ম, দুর্নীতি, অপকর্ম ঢেকে রাখা যাবে না। গণ-প্রচারযন্ত্র কায়েমি স্বার্থে ব্যবহার করার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমি জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আবারও আহবান জানাচ্ছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন। জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৮ এর মতো একের পর এক জঘন্য কালাকানুন তৈরি থেকে সরে আসুন। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভোটারবিহীন সংসদে বলেছেন, যদি জনগণ ভোট দেয় আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। বন্ধুরা, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য আবারও প্রমাণিত হলো তার মন রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ভরা। উনি রাষ্ট্রক্ষমতা আটকে রেখেছেন জনগণের কল্যাণে নয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করাটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, আইনি ব্যবস্থায় প্রতারণামূলক নীতি কার্যকর আছে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে। সুতরাং সেটিরই প্রতিফলন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। সেজন্য তিনি যা ইচ্ছা তাই করার হুমকি দেন। আপনার আরও দেখেছেন শুধুমাত্র ন্যায্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার হিড়িক চলছে। গতকাল তার বিরুদ্ধে চুরির মামলাও দায়ের করা হয়েছে। কতটা অসংস্কৃত ও হিংস্র আচরণ করা যায় তার সবটাই প্রয়োগ করা হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের ওপর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা, মানবধিকার কর্মীরাও আজ সরকারের সহিংস আচরণ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলে রাখি জনগণের এজলাসে বিচারের মুখোমুখি হতে ক্ষমতাসীনরা যেন প্রস্তত থাকে। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, কুমিল্লার মুরাদ নগরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ছোবলে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্ষতবিক্ষত। মুরাদনগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ রানাকে আটক করে শারীরিকভাবে প্রচন্ড নির্যাতন করার পর প্রথমে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানোর পর অবস্থা গুরুতর হলে কুমিল্লা শহরে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। কুমিল্লা (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তার সহকর্মী মাসুদ রানাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে গেলে তাকেও চরম নির্যাতন করা হয়। মুরাদনগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাদশাকে গ্রেফতার করে তার ওপর চরম নির্যাতন করা হয়। : তিনি আরো বলেন, সিলেট জেলায় গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে এলাকায় এলাকায় চিরুনি অভিযান চলে। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে সরকারি হানাদারি তীব্র আকার ধারণ করে। জনসভায় যোগ দিতে আসা মানুষদের শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে দিয়ে সরকারি দলের পান্ডারা পুলিশের সহযোগিতায় তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে। সিলেট মহানগর ছাত্রদলের নেতা আবদুল খালেক মিল্টন, আবু ইয়ামিন ও সুমনকে গ্রেফতার করেছে। সিলেট মহানগরে গত পরশু সিলেট মহানগরের সাবেক আহবায়ক ডাঃ শাহরিয়ারসহ ১৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের পর শাহরিয়ারসহ ১ জনকে ছেড়ে দিলেও ১২ জনকে কারাগারে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এস কে হারুন অর রশিদ কলেন্ডাল, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের যুবদলের সাধারণ স¤পাদক আশাফুলসহ ৩ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ঘিওর কলেজের নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা অন্তু, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা বিএনপির ৪ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার ১ নং দায়না ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমদাদ, মিন্টু মালিধা, কালীগঞ্জ থানা বিএনপির নেতা মফিজুর রহমান, হাফিজুর রহমান, রাশেদ ও যুবদলের সভাপতি রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রাম জেলা বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চৌধুরী ও আউয়াল চৌধুরীসহ মোট ১৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রায়হানুল কবিরসহ মোট ২৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য ক্রিসেন্ট এবং শ্রীবর্দী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কোরবান আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রাম জেলা জাসাসের সাবেক আহবায়ক আব্দুল আউয়াল চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও মিরসরাই বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক মঞ্জুরুল হক বাহার, আব্দুর রহিম বাবলু, জেলা ওলামা দলের যুগ্ম আহবায়ক মাইনুদ্দিন মনি, বিএনপি নেতা মানিক, মিরসরাই পৌর বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সদস্য মাসুম বিল্লাহ, আরব-আমিরাত জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি নুরুন্নবী করিম বাবলু, পৌর যুবদল নেতা জাফর, শাওন, বাবলু, ছাত্রদল নেতা নাজিম ও জেলা বিএনপির অফিস সহকারী কাশেমকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায় গতকাল রাতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সভা থেকে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন, সহ-সভাপতি সোহেল আরমান, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন, পৌর ছাত্রদল সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সিনি: সহ-সভাপতি ইব্রাহিম, সহ-সভপতি ফাহাদ, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ শাখা সভাপতি আব্দুল্লাাহ, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম, যুগ্ম সম্পাদক বিপ্লবসহ মোট ২২ জন উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ। : : দিনকাল রিপোর্ট :

শেয়ার করুন