দেখা করতে পারছেন না তার ডাক্তাররা হাসপাতালে খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না : রিজভী

0
211
Print Friendly, PDF & Email

: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেই সাথে তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন তা সন্ত্রাসী আচরণ এবং তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন ছুটি নিয়েছেন নাকি নিতে বাধ্য করা হয়েছে তাও রহস্যজনক। ইসিকে সর্বোচ্চ চাপে রেখে কাজ করাচ্ছে সরকার। গতকাল রবিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। সরকারি ইচ্ছাধীন চিকিৎসায় দেশনেত্রী যে সুচিকিৎসা পাবেন না সেই আশঙ্কাটি আমরা পূর্বেই করেছিলাম। এ বিষয়ে বারবার আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করা হয়েছে। সর্বাধিক জনপ্রিয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে বন্দি করে রাখাই হয়েছে তো কষ্ট দেয়ার জন্য, সেখানে উন্নতমানের চিকিৎসার প্রশ্নই আসে না। বিএসএম এমইউতে শুধুমাত্র যে ফিজিও থেরাপি দেয়া হয় সেটিও পর্যাপ্ত নয়। তার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য, অথচ এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষায়িত হাসপাতালে দেশনেত্রীর চিকিৎসার দাবিকে সরকার তাচ্ছিল্য সহকারে অগ্রাহ্য করেছে রাষ্ট্রক্ষমতার আতিশয্যে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তো সরকার প্রধানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে না। সেই জন্যই আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে সজ্জিত বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসার সুযোগ থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের ধ্বজাধারী প্রধানমন্ত্রী দেশের একজন অগ্রগণ্য জাতীয় নেতাকে অনুন্নত চিকিৎসার সরঞ্জামাদির আওতায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বাধ্য করছে। : তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্রমপ্রসারমান নৈরাজ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে। এরা যেন নিজ দেশেই পরবাসী। অবৈধ শাসকগোষ্ঠী ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত আক্রমণে সারাদেশটা আওয়ামী লীগের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। এদেশে আওয়ামী নেতাকর্মীরা ছাড়া ভিন্ন মত, পথ ও বিশ্বাসের মানুষের নিরাপদ সুস্থ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। নিরঙ্কুশ আওয়ামী আধিপত্যের কাছে কুর্নিশ করতে দেশের মানুষকে বাধ্য করার চেষ্টা করতে গিয়ে সরকারি অফিস, পুলিশ, প্রশাসন, হাসপাতাল, চিকিৎসা, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, বীমাসহ সর্বত্রই চলছে এক ভয়াবহ ‘এনার্কি’। বিভাজনের নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় পরিচয়ের চেয়ে দলীয় গজকাঠিতেই পরিমাপ করা হচ্ছে মানুষের যোগ্যতা, দক্ষতা, চিকিৎসা সেবা ও মানবতা। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমি আবারও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য তার পছন্দমত চিকিৎসক এবং হাসপাতালের ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এখন এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া প্রহসনের নির্বাচন জনগণ নির্ভীক চিত্তে প্রতিহত করবে। আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রীর মুক্তি। : তিনি আরো বলেন, বেআইনিভাবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৯ অক্টোবর ২০১৮। আমরা আগেই বলেছি বিবাদীর অনুপস্থিতিতে মামলার রায় নির্ধারণ পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। সরকার প্রধানের নির্দেশেই সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলকভাবে এ রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। সেজন্যই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রায়ের দিন ধার্য করে নিয়েছে। আরেকটি ফরমায়েশি রায় হতে যাচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য দেশবাসী প্রহর গুনছে। এ আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে কিনা সেই প্রশ্নও মানুষের মনে জেগে উঠছে। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চারদিকে নৈরাশ্যের ছবি। সরকার পুনরায় একতরফা নির্বাচন করার জন্য এখন এজিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ভোটাররা বাড়ি ছাড়া, ঘর ছাড়া, গ্রাম ছাড়া, জেলা ছাড়া। এজিদের মতো ফোরাত নদীর তীর অবরোধ করার ন্যায় এরা মানুষের ভোটাধিকারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সন্ত্রাসী পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে। ইইউ ইসিকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। অন্যান্য দাতা ও সাহায্য সংস্থা, বিদেশি মিশন থেকেও নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে বর্তমানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন তা সন্ত্রাসী আচরণ এবং তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন ছুটি নিয়েছেন নাকি নিতে বাধ্য করা হয়েছে তাও রহস্যজনক। ইসিকে সর্বোচ্চ চাপে রেখে কাজ করাচ্ছে সরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার ও কর্মকর্তারা নিজেরা যে আচরণবিধি তৈরি করছেন তা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি আচরণবিধি। কারণ এই কমিশনের কয়েকজন আধিকারিক কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে সরকারকে দিতে চান। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির করতে আইন করতে চাচ্ছেন। : রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে হাইকোর্টের নিষেধ অমান্য করে পরপর তিনটি নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। প্রচন্ড অসুস্থ শিমুল বিশ্বাসকে চিকিৎসাও দেয়া হয়নি। পিজিতে চিকিৎসা শুরু হতে না হতেই তড়িঘড়ি করে শুক্রবার বন্ধের দিন কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো যাবে না, হাইকোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও নজিরবিহীনভাবে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার নামে। হানাদারি সরকারের কাছে আইন আদালতের কোনো বালাই নেই। আমরা শিমুল বিশ্বাসের ওপর সরকারের অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। : তিনি আরো বলেন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক সায়েমের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের ১৫/১৬ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোতাহের হোসেন মানিকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ২০/২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় যুবদল কর্মী খোকন, বেলাল ও বিএনপি কর্মী মাহফুজসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোতাহের হোসেন মানিক নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছিলেন। এ সময় ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। আমি দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এহেন বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। : নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করে রিজভী বলেন, সিলেট বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সাখোয়াত হোসেন জীবন আদালতে জামিন নিতে আসলে তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও তার নিশর্ত মুক্তি দাবি করছি। গতরাতে সিলেটে সারারাত ধরে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা কেউ বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছে না। অশীতিপর বৃদ্ধ সিলেট মহানগর ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান বুদুইকে গতকাল রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি সিলেট মহানগর পুলিশের এই তান্ডবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও সাইদুর রহমান বুদের নিশর্ত মুক্তি দাবি করছি। ঢাকা মহানগর রমনা থানা ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল মোতালেবু প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বাসায় ফেরার পথে মালিবাগ থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে রামপুরা থানায় নিয়ে যায়। জামিন হওয়ার পরও গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় জেলগেট থেকে তাকে পুনরায় আটক করে রমনা থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় নিয়ে চোখে কাপড় বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয়। গতকাল আবারো নতুন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ছাত্রনেতা রবিউল ইসলাম নয়নকে আবারো দুইদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জুলুম নির্যাতন করার জন্যই বারবার তাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। আমি অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল করে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। : ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান খান বাপ্পিকে গ্রেফতার করেছে। এখন পর্যন্ত গত ১.০৯.২০১৮ তারিখ হতে ১৯.১০.২০১৮ তারিখ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট গায়েবি মিথ্যা মামলা ৪,২১৩টি এবং এজাহারে জ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৯৫,৬৩২ জন, এজাহারে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২,৮৮,১৪৬ জন, সর্বমোট জ্ঞাত ও অজ্ঞাত এজাহার নামীয় আসামি ৩,৮২,৭২৮ জন। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৫০৬০ জন। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন প্রমুখ।দিনকাল রিপোর্ট

শেয়ার করুন