সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে অবিলম্বে সিধা পথে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। কিন্তু সেটা হতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা বলেছি একটা পরিবর্তন চাই। তাই বলছি দয়া করে সোজা রাস্তায় আসুন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তার সঙ্গে আলাপ করুন, বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ করুন এবং দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে তার পথ বের করুন। এছাড়া অন্য কোনো পথের বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ফরমায়েশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। : নির্বাচন কমিশন নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন যে, আমি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবার জন্য যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলাম, সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না। আরেকজন কমিশনার বলছেন আন কনস্টিটিউশনাল কথা বলছেন এই কমিশনার। এসব বক্তব্যে নির্বাচন কমিশন নিজেরাই তো বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কমিশন তো একটাই থাকতে হবে। তাদের যা কিছু বক্তব্য আসবে তা কমিশনের একটাই আসতে হবে। আজকে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন কমিশনে, এই সংকটটাই হচ্ছে এখন রাষ্ট্রের সংকট। তাই বিভক্ত নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, জোর করে একটা দলকে ক্ষমতায় বসাতে সব প্রকার আইন কানুন করে ২০১৪ সালের মতো আরেকটা নির্বাচন করতে যাচ্ছে সরকার। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের পুরোটাই নির্ভর করতে হয় সরকারের কর্মকর্তা এবং সরকারের ওপর। নির্বাচন কমিশনের সচিবের কথায় মনে হয়, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনে মনে হয়, সব চেয়ে অসহায় ব্যক্তি। তিনি কিছুটা এরশাদ সাহেবের মতো সকালে এক কথা বলেন, বিকেলে আরেক কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না। সব সময় নীরব ভাববেন না। কারণ এ দেশের মানুষ বারবার নিজেদের প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে এসেছে। আবারও রাস্তায় নামবে। : মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২৩ অক্টোবর একটা সমাবেশ করতে যাচ্ছিল, সরকার বলছে নাশকতা হবে, দেয়া যাবে না। অথচ চরমোনাই পীর সাহেবকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। আজকে হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেব রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে সরকারি টাকায় গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে সভা করেছেন। এখানে কোনো নাশকতা হবে না। আমরা করতে গেলেই নাশকতা। বিরোধী দল কথা বলতে গেলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষ উনি নাকি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন। তার বিরুদ্ধে এখন জমির মামলা-টামলা শুরু হয়ে গেছে, যেহেতু তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সেগুলো মানুষ বোঝে। মানুষকে বোকা ভাবার কোনো কারণ নেই। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, কারাগার থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। নূ্যূনতম চিকিৎসাও তিনি পাচ্ছেন না। : মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। বহু নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এভাবে একটি দলের ওপর নির্যাতন করলে কীভাবে সুষ্ঠু রাজনীতি হয়। নির্বাচনই বা সুষ্ঠু কেমনে হবে, যোগ করেন তিনি। : সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বলেন, শেখ হাসিনার মনোজগত এখন রাজনীতির প্রতিহিংসায় নিমজ্জিত। তাই দেশের চলমান রাজনীতিতে মহাসংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নামে তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হয়েছে। : তিনি বলেন, যতোই ষড়যন্ত্র করুন না কেন জিয়া পরিবারসহ বিএনপিকে রোখা যাবে না। সময় আসন্ন, অচিরেই পতনের পূর্বাভাস শুনতে পাবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। : জাগপা সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, জাগপার সহ-সভাপতি আবু মোজাফফর মো. আনাছ, মাস্টার এমএ মান্নান, আসাদুর রহমান খান, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, শেখ জামাল উদ্দিন, বেলায়েত হোসেন মোড়ল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইনসান আলম আক্কাছ, প্রিন্সিপাল হুমায়ুন কবির, যুব জাগপার সভাপতি আরিফুল হক তুহিন, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রুবেল, চট্টগ্রাম মহানগর জাগপার সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল, মহিলা নেত্রী সেলিমা ফয়েজ প্রমুখ। : :দিনকাল রিপোর্ট :