নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : রিজভী

0
161
Print Friendly, PDF & Email

গতকাল মাওয়া ও শিবচরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আজগুবি, উদ্ভট, স্ববিরোধী নানা কথা বলেছেন বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিনি তার বক্তব্যে নিজ দলের অনাচারগুলোর দায় অন্যের ওপর চাপিয়েছেন।

আজ সোমবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ বলেন।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে, দেবালয়ের পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছে, বিদেশীরা হত্যার শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগের এমপি কচি বাচ্চা ছেলের পায়ে গুলি করেছে, নারায়ণগঞ্জের নিষ্পাপ কিশোর ত্বকী হত্যারও অভিযোগ সেখানকার আ’লীগের একজন এমপির বিরুদ্ধে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে আপনি বক্তৃতায় অন্যকে খুনী, দুর্নীতিবাজ বলছেন। অথচ খুন, জখম যে আওয়ামী শাসনের ঐতিহ্য তা কিন্তু মানুষ ভুলে যায়নি।’

তিনি বলেন, আমি আবারো প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় একের পর এক সাজা দিয়ে আপনার ক্রোধাগ্নী নির্বাপন করতে পারেননি, এর উপর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে পাথর চাপা দিয়ে সারা জাতির দম বন্ধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন করে-আপনারা গণতন্ত্রকেই লকআপ করেছেন। এখন মানুষ মন খুলে কথা বলতে এবং হাসতেও ভয় পায়। মানুষ এখন ডিজিটাল আতংকে ভুগছে। আপনার নির্বাচনে ভোটারদের কোনো অস্তিত্ব নেই, আপনার অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে তা ভোট ডাকাতি। গণমাধ্যমগুলোর মালিক ও সাংবাদিকরা চরম আতংকে আছেন।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হয়ে গেল, বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেল, ঘুষ ছাড়া এখন কিছুই হয় না, ঘুষ নিতে মন্ত্রীরাও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে উৎসাহিত করে। অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন- বাংলাদেশে এখন পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হচ্ছে, তারপরেও কি বলতে হবে আওয়ামী মহাজোট সরকার সৎ ও স্বচ্ছ সরকার?

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, এখন চালের কেজি ৮০ টাকা হয়েছে, ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই, তেলের লিটার এখন ১১০ টাকা, সকল নিত্যপণ্যের দাম এখন গ্যালাক্সিতে গিয়ে ঠেকেছে। কর ও ট্যাক্সের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে আলোর গতিতে। এই পরিসংখ্যান তো প্রধানমন্ত্রী তার গতকালের বক্তব্যে উল্লেখ করেননি। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পার কিলোমিটার রাস্তা তৈরীতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশে তা হয় কয়েক গুণ। এই বাড়তি ব্যয় তো হয় শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের পকেট ভারীর জন্য। প্রধানমন্ত্রী একথা স্বীকার না করলেও জনসমাজে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

রিজভী বলেন, সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ইভিএম এর বিরোধীতা করলেও সরকারের অনঢ় প্ররোচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইভিএম পদ্ধতি কেনো চালু করতে চাচ্ছেন, সেই থলের বিড়ালটি এখন বেরিয়ে পড়ছে। ভারতের চেয়েও এগারো গুণ বেশি দামে ইভিএম কেনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভোটের আগে বেশ বড় পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়া। নির্বাচনের প্রাক্কালে এই টাকা কমিশনের কিছু ব্যক্তিকে উপহার দিলেন কী না, এটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। কারণ অনেক কর্মকর্তা কমিশনের নিরপেক্ষতা ভেঙে সরাসরি সরকারের দুষ্কর্মের সঙ্গী হতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।

দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা তারেক রহমানের
রিজভী আরো বলেন, আজ থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আপনাদের মাধ্যমে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন- উৎসব মানুষের আনন্দময় সত্তার জাগরণ ঘটায়, তার আত্মাকে মিলনের বোধে উদ্দীপ্ত করে। উৎসব সব মানুষের মিলনই শুধু সম্পন্ন করে না, এটি নানা সম্প্রদায়কে সংযুক্ত করে নানাভাবে। উৎসবের অন্তর্লোক হচ্ছে-শান্তি ও সহাবস্থান। শান্তি, শৃঙ্খলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আবহমান বাংলার ঐতিহ্য। ঐতিহাসিকভাবে বহমান এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলের মহাসচিব।

সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো: ইউছুফ, ছাত্রদল নেতা মো: ফরহাদ, মো: সায়েদসহ পাঁচজনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রামে জেলা যুবদলের মো: মোজাম্মেল হোসেনসহ ছয়জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রদলের নেতা শাহারাজ ও সফর আলী জনিসহ তিনজনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের রফিকুল ইসলাম রফিক এবং পৌর বিএনপির নেতা সোহেল রানা, নরসিংদীর যুবদল নেতা আবুল খায়ের সুমন ও মেহেদী হাসানসহ সাতজনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার করুন