বীমার টাকা বিনিয়োগ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকরা

0
227
Print Friendly, PDF & Email

বীমায় সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভাবেই বীমা খাত প্রসারিত হচ্ছে না। গ্রাহকের টাকা নিয়ে মাঠ কর্মীর লাপাত্তা হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। আর পলিসির টাকা ফেরত পেতে হয়রানি তো রয়েছেই। বীমা খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পরে রয়েছে। এতে করে গ্রাহকরা লাভবান হচ্ছে না। আর এ কারণেই বীমায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম।

ঢাকা শহরে চলতে বিভিন্ন পরিবহনে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন নজরে আসে। এসব বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে, লাইফ গ্রুপ অফ কোম্পানি, বিএলআই প্রাইভেট কোম্পানি, টিএলসি প্রাইভেট কোম্পানি। ‘পার্ট-টাইম জব’ ‘স্টুডেন্ট-জব’ এসব প্রস্তাব বেকারদেও নজর কাড়ে। পদের নাম ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, ইউনিট ম্যানেজার, ডেস্ক অফিসার, রিসিপশনিস্ট, সিনিয়র অফিসার, জুনিয়র অফিসার। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি থেকে মাস্টার্স। বেতন, পার্ট টাইম ৩ ঘন্টা ৭৫০০-৮৫০০ (আলোচনা সাপেক্ষে)। ফুল টাইম ৫ দিন (৫ ঘন্টা) ১৩০০০-১৫০০০ (আলোচনা সাপেক্ষে)।

বিজ্ঞাপণকর্তা প্রথমে মৌখিক পরীক্ষার জন্য অন্য টেবিলে পাঠান। এদের মৌখিক পরীক্ষার কমন প্রশ্ন, আপনাকে যদি অমুক পোস্টের জন্য ২ দিন ট্রেনিং করানো হয় আপনি কি পারবেন? স্বাভাবিকভাবেই সবার কমন উত্তর ‘হ্যাঁ’। দ্বিতীয় ধাপে বলা হয়, আপনাকে এই কোম্পানির রেজিষ্ট্রেশন ফি ৫২০ টাকা জমা দিতে হবে কোম্পানির একটা আই ডি নম্বরের জন্য। ২ দিন ট্রেনিং শেষে বলা হয় অন্তত ১ টা জীবন বীমা আপনাকে করাতে হবে অথবা নিজেকে করতে হবে। অন্যথায় আপনাকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য যে, ১ লাখ টাকার ১০ বছর মেয়াদী একটা বীমা করাতে প্রথম প্রিমিয়াম জমা দিতে হয় ১০ হাজার ৮ শত ২৫ টাকা। এর ৪০ শতাংশ টাকা পায় বীমা কোম্পানির বিজ্ঞাপন কর্তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে চাকরি প্রার্থীরা। সারাবিশ্ব যেখানে বীমা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের বীমা খাত ক্রমশ নিচের দিকে নামছে এ সমস্ত কারণে।

মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমদ জানান, এ দেশে বীমা সম্পর্কে মানুষের ভালো ধারণা ছিলনা। বীমা খাতে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হয়েছে অনেক পরে। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-কানুন তৈরি করছে। বীমা খাতের অর্থ বিনিয়োগের জন্য নীতিমালা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বীমা কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করতে হবে। বীমার ওপর মানুষের আস্থা ধরে রাখার এটাই মূলমন্ত্র। আর এটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বীমা কোম্পানি মিলে কাজ করতে পারলে ভবিষ্যতে দেশের বীমা খাত আরো টেকসই হবে। মানুষ জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর্রপর যে ধরণের পলিসি থেকে লাভবান হবেন সেই ধরণের উদ্ভাবনী পণ্য চালু করতে হবে বলে মনে করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।

অনেকেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে, বছরে বছরে ভালো লভ্যাংশও দিচ্ছে। দেশের বীমা খাতে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। বিশাল অঙ্কের এই তহবিল লাভজনক কাজে ব্যবহার করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। বিশাল এই তহবিল গ্রাহকের পলিসির টাকা। এতে মুনাফা বেশি হলে গ্রাহক লাভবান হয়। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কম। ফলে ব্যাংকে এফডিআর করলে খুব বেশি লাভ আসে না।

সরকারের সুস্পস্ট নীতিমালা এবং বীমা পেশার সাথে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীরা সততার মাধ্যমে যদি তাদের পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করেন তাহলে হয়ত অন্যান্য উন্নত দেশগুলোরমত বাংলাদেশের বীমা খাতও অচিরেই আলোর মুখ দেখবে।স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার করুন