সন্তানের সুস্বাস্থ্য কে না চায়। সব বাবা মা-ই চায় তার সন্তানটি হোক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, বেঁচে থাকুক সুস্থ ভাবে। যখন একজন নারী গর্ভবতী হয় তখন তার জন্য দরকার বাড়তি যত্ন। এসময় স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত যাতে তার গর্ভস্থ শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় বেড়ে উঠার জন্য। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলেই যে শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে ব্যপারটা ঠিক তা নয়। মাকে বেশী করে পুষ্টিসম্মত খাবার (শাক, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল,বাদাম) খেতে হবে। নিয়মিত সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে, রেগুলার রুটিন চেক আপ করতে হবে এবং অন্তত সপ্তাহে ৩-৪ দিন হালকা ব্যায়াম (ফ্রি হ্যান্ড) করতে হবে ১৫/২০ মিনিট, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
নবজাতকের খাবার :নবজাতককে জন্মের পরপরই মায়ের বুকের শাল দুধ দিতে হবে। শালদুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশুকে কোন মধু, গ্লুকোজ বা চিনি দেয়া যাবেনা। এগুলো দেওয়ার ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ ব্যতীত অন্য কোন খাবার দেয়ার প্রয়োজন নেই এমনকি পানিও না।
৬ মাস পর শিশুর খাবার: ৬ মাস পর শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য বাড়তি খাবারও দিতে হবে (চাল, ডাল, সবজি দিয়ে পাতলা খিচুড়ি, সুজি, সেরেলাক, ফলের জুস, ওটস দুধ, বাসায় বানানো সবজির স্যুপ)। শিশুদের খাবারে চিনি, লবণ, মধু যোগ করবেন না। যে কোন নতুন দুইটা আইটেমের মধ্যে ৩ দিনের একটা গ্যাপ রাখুন। এই খাবারে আ্য্যলার্জি হছে কিনা সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায়। বাসি খাবার শিশুকে দিবেন না। দেড় বছর বয়সের বাচ্চাদের মোটামুটি বড়দের মত সব ধরণের খাবারই অল্প অল্প পরিমাণে দেয়া যায়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় ডিম, দুধ, ফল, শাক, সবজি, মাছ, মাংস, গমের রুটি ইত্যাদি রাখুন।
শিশুকে যেসব খাবার দেয়া যেতে পারে- সবজি, শাক, ডাল, চাল দিয়ে খিচুড়ী, সুজি, ফলের জুস (কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, ডালিম, আম), ফল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ওটস দুধ, ম্যাঙ্গো শেক, ব্যানানা শেক (দুধ বা দই দিয়ে), বাদাম, স্যান্ডউইচ (টুনা মাছ, ডিম, সবজি, কলা নরম করে রুটির মাঝে দিয়ে), ভাত, রুটি।
যেসব খাবার বাচ্চাদের একদম দেয়া উচিত না-
চকোলেট, চিপস, আইসক্রিম, চা, কফি, চুইংগাম, অতিরিক্ত তৈলাক্ত, টক, ঝাল বা মিষ্টি খাবার। এসব খাবারে বাচ্চাদের ক্ষুধা মন্দা তৈরি হয়। বাচ্চারা আর কিছু খেতে চায় না।
বাচ্চাদের খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম : ১. খেতে না চাইলে জোর করে, রাগারাগি করে খাওয়াবেন না। ২. একই রেসিপি প্রতিদিন দিবেন না, ২-৩ দিন পরপর নতুন রেসিপি দিবেন যাতে বাচ্চাদের একঘেয়ে না লাগে। ৩. ভাজা পোড়া বা স্ন্যাকস কম রাখুন খাদ্য তালিকায়। ৪. দুই থেকে আড়াই ঘন্টা পরপর অল্প অল্প খাবার খাওয়ান, পরিমিত খাবার দিন। ৫. মজা করে খাবার রান্না করবেন শিশুদের জন্য। খাবার মজাদার না হলে বাচ্চারা খেতে চাইবে না। ৬. বাচ্চা যেটা খেতে চায় না সেই উপকরণ দিয়ে ভিন্ন রেসিপির খাবার তৈরি করে দিন। যেমন সবজি না খেতে চাইলে সবজির বড়া, স্যুপ, রোল করে দিতে পারেন। ডিম খেতে না চাইলে পুডিং, কেক বানিয়ে দিতে পারেন। ৭. হাত দিয়ে খেতে উৎসাহিত করুন। ৮.টিভি দেখতে দেখতে বা গেম খেলা অবস্থায় বাচ্চাদের খাওয়াবেন না। এতে তাদের খাওয়ার প্রতি মনোযোগ থাকে না। সুন্দর গল্প বলে কিংবা রঙ্গিন ছবিসহ গল্পের বই দেখিয়ে খাওয়াতে পারেন। খাবার খাওয়ার সময় তাকে উৎসাহিত করুন। ৯. বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য সুন্দর, রঙ্গিন বা কার্টুনের ছবি আছে এমন প্লেট, গ্লাস ব্যবহার করুন। তাতে খাওয়ার প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়বে। ১০.পরিবারের সবার সাথে বাচ্চাকেও বসিয়ে একসাথে খাবার খাওয়ান। এতে বাচ্চার পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়বে। সবার সাথে প্রতিযোগিতা করে খেতে উৎ্সাহিত করুন। এতে শিশু তাড়াতাড়ি খাওয়ার পাশাপাশি তার অপছন্দের খাবারও খেয়ে ফেলবে। ১১.সর্বোপরি শিশুর পছন্দের খাবারে অগ্রাধিকার দিবেন খাদ্য তালিকায়।
-উম্মে সালমা তামান্না
নিউট্রিশনিস্ট ও ডায়েট কনসালট্যান্ট
বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন