কোনো দেশ এত দ্রুত উন্নয়ন করতে পারেনি :প্রধানমন্ত্রী ২০ জেলায় ৩৩টি প্রকল্প উদ্বোধন

0
182
Print Friendly, PDF & Email

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত বিশ্বের অন্য কোনো দেশ উন্নয়ন করতে পারেনি। বাংলাদেশ গত দশ বছরে উন্নয়নের মহাসড়কে যে পথ পাড়ি দিয়েছে, তা অসাধ্য সাধন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ২০ জেলায় ৩৩টি প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গত দশ বছরে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে এবং দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দিনবদলের ঘোষণা দিয়েছি। দিনবদলের যাত্রা শুরু করেছি। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়িয়েছি। যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। প্রযুক্তির জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি। মানুষ তথ্য প্রযুক্তির সেবা পাচ্ছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত সাতটি সেতু, একটি জেটি, নয়টি উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম এবং ছয়টি নগর মাতৃসদন ভবন ও দশটি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে নিজের জীবনকে উত্সর্গ করেছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির সড়কে ডেপা নদীর ওপর ২২৮ মিটার দীর্ঘ সেতু, জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫৬০ মিটার দীর্ঘ ‘শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেতু’ ও ‘শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম সেতু’, টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ৫২০.৬০ মিটার দীর্ঘ ‘দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা সেতু’, শ্রীপুর উপজেলায় ৩১৫ মিটার দীর্ঘ সেতু, মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর ৬৮৬.৭৫ মিটার দীর্ঘ ‘শেখ লুত্ফর রহমান সেতু’ এবং নড়াইলে চিত্রা নদীর ওপর ‘শেখ রাসেল সেতু’ উদ্বোধন করেন। টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে নির্মিত ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকার মিরপুর এক নম্বর সেকশনে, গাজীপুরের দক্ষিণ কোলার বাজারের ধীরাশ্রমে, রংপুরের পূর্ব খাসবাগে, কিশোরগঞ্জের হারুয়ায়, কুষ্টিয়ার মিলের পাড়ায় ও গোপালগঞ্জ পৌরসভায় ছয়তলা নগর মাতৃসদন এবং গাজীপুরের নীলের পাড়ায়, কুমিল্লার কমলাপুর, বাউবন্দ ও রসুলপুরে, রংপুরের এরশাদ নগর ও জুমাপুড়ায়, কুষ্টিয়ার বারাদি ও বড়খাদায়, কিশোরগঞ্জের নুরানী ও তারাপাশায় তিনতলা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। নীলফামারীর ডোমার, নওগাঁর আত্রাই ও রাণীনগর, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, যশোরের শার্শা এবং নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যত্নবান হতে বলেন। ভিডিও কনফারেন্সে মাদারীপুর, কুমিল্লা, নওগাঁ, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির উপকারভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।

স্প্যানিশ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন করেছেন। গতকাল সকালে গণভবনে ঢাকাস্থ স্প্যানিশ দূতাবাস প্রকাশিত এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বইটি স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশের জন্য স্প্যানিশ দূতাবাস এবং বইটির সম্পাদনা ও অনুবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। ২০১২ সালের ১৮ জুন জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথমবারের মত একইসঙ্গে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়। বইটি এ পর্যন্ত ১০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, চৈনিক, জাপানি, ফরাসি, উর্দু, আরবি এবং স্প্যানিশ ভাষা। বইটি রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদের কাজ চলছে। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে বারবার কারা নির্যাতন ভোগকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে থাকার সময় তার আত্মজীবনী লেখেন। এতে তিনি তাঁর বংশবৃত্তান্ত, জন্ম, শৈশব এবং ছাত্রজীবনে সামাজিক এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সে সময়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা বিবৃত করেছেন।

ঢাকায় স্পেনের রাষ্ট্রদূত আলভারো ডি সালাস গিমেনেজ ডি অ্যাজকারাটে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রীর ২০ কোটি টাকা অনুদান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে আরো ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রয়োজনে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য বর্তমান সরকার সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিল গঠন করে। গতকাল গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালালের হাতে চেক হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য সচিব আবদুল মালেক, পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক এবং বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (পিআইও) কামরুন নাহার, বিএফইউজে’র মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ কোটি টাকা সিডমানি দিয়ে ২০১৪ সালে ট্রাস্ট তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেন। গত চার বছরে বিভিন্ন বেসরকারি মিডিয়া থেকে দেওয়া আরো টাকায় তহবিল ১৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো ২০ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

খেলাধুলার বিকাশে সরকার সবই করবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খেলাধুলার বিকাশে যা যা করতে হয়, সরকার তার সবই করবে। কারণ এর মাধ্যমে দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরা এবং মানুষের মধ্যে একটা মর্যাদাবোধ আনা যায়। এছাড়া খেলাধুলার ফলে শারীরিক ও মানসিক গঠন মজবুত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা খেলাধুলাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছি। সেইসঙ্গে সংস্কৃতি চর্চাকে গুরুত্ব দিয়েছি। হয়ত একসময় আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম, হয়ত অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। অনেক বাধা ছিল। এখন আমাদের আর সেই বাধা নেই। বাধা অতিক্রম করে আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাওয়া আমাদের অব্যাহত থাকবে। দেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবই।’

গত সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ভিয়েতনামকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এই নৈপুণ্যের জন্য খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে ফুটবল উপহার দেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।ফারাজী আজমল হোসেন

শেয়ার করুন