জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল কর্মবিরতি পালন করে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এ সময় রাস্তায় গাড়ি চলাচলেও তারা বাধা দেয়। ছবিটি গাজীপুরের টঙ্গী থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
অ- অ অ+
সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড, দয়াগঞ্জ, সায়েদাবাদ, ধোলাইখাল, গাবতলী, আমিনবাজারসহ বিভিন্ন ট্রাকস্ট্যান্ড ও টার্মিনাল থেকে ভারী যানবাহন বের হয়নি। ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে তৈরি পোশাক, খাদ্যদ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় পণ্যবাহী গাড়ি ঢোকেনি।
ধর্মঘট আহ্বানকারী ঐক্য পরিষদ সাতটি দাবির জন্য কর্মবিরতি শুরুর ডাক দেয়। এসব দাবির মধ্যে আছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন করা, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণ না করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল ও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা, টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য হাসমত আলীসহ মালিক ও শ্রমিকদের মুক্তি দেওয়া, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা, গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ট্রাক টার্মিনাল বা স্ট্যান্ড নির্মাণ করা ইত্যাদি।
গত শনিবার বিকেলে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে ঐক্য পরিষদের সমাবেশ হয়েছিল। সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবি আদায়ে ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট বা চালকদের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মকবুল আহমেদ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের চাপে পড়ে এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামেই প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার তৈরি পোশাকবাহী ভারী যান চলাচল করে। এর বেশির ভাগ আজ চলেনি। সরকার আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো কথা বলেনি। তাই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
ঢাকা বিভাগ ছাড়াও বগুড়াসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম পাটোয়ারীর কাছে আইন পাস হওয়ার পর কেন ধর্মঘট ডাকা হলো—প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় নেতারা বলেছিলেন এ আইন পাস হবে না। আইন অনুমোদনের আগের সব প্রক্রিয়ায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহসহ অন্যদের মতামত নেওয়া হয়েছে। অথচ পণ্য পরিবহন নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। আমাদের অন্ধকারে রেখেই কড়া সব বিধান রাখা হয়েছে
ওই আইনে। মাথায় খড়্গ নিয়ে চালকরা ভারী গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না।’
ধর্মঘট আহ্বানকারী ঐক্য পরিষদের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, আইন সংশোধনের দাবিটিই তাঁদের কাছে মুখ্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি চলবে না। দাবি মেনে নেওয়া হলে আগামী দিনে যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করা হবে। তাঁরা সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪, ৯৮, ১০৫ ও ১১৭ ধারায় সংশোধনী আনার ওপর জোর দিচ্ছেন।
গতকাল সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ট্রাক-লরি-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। তারা দুপুরে হঠাৎ বাস ও ট্রাক থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে। লাইসেন্স পাওয়া যায়নি এমন কয়েকজন চালকের নাকে-মুখে পোড়া ইঞ্জিন অয়েল লেপে দেয়। তবে বৈধ লাইসেন্সধারীদের গাড়ি চালানো বন্ধ রেখে আন্দোলনে যোগ দেওয়ানোর জন্য চেষ্টা করে।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদও নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধনের দাবি তুলেছে। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে সংগঠনটি সমাবেশ করে নতুন আইন সংশোধনের দাবি তোলে প্রকাশ্যে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, সহসভাপতি আব্দুল করিম দুদু, মহাখালী টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম প্রমুখ।
সরকারকে আলটিমেটাম
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা বিএনপি-জামায়াত করে তারা এই পণ্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। আমরা সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারা জামিন অযোগ্য করাসহ বিভিন্ন দাবির একটি স্মারকলিপি গত ২৭ সেপ্টেম্বর সড়কমন্ত্রীর কাছে দিয়েছি। তারপর গত ৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছি। আমরা ১১ অক্টোবর মানববন্ধন করব। দাবি না মানা হলে ১২ অক্টোবর ফেডারেশনের সভায় পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ১৩ অক্টোবর থেকে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট ডাকতে পারি।’
নিজস্ব প্রতিবেদক