বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে সরকার মামলার পথ বেছে নিয়েছে মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে ৯০ হাজার ৩৪০টি। এসব মামলায় ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গায়েবি মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৪ জন। রিমান্ডে গেছে ২৪৭ জন। আমাদের দক্ষিণের সভাপতি হাবিব- উন নবী খান সোহেল এখনো রিমান্ডে আছেন। একটার পর একটা রিমান্ড তার চলছে। ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামির সংখ্যা অবিশ্বাস্য। কেউ বিশ্বাস করবে না। ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন, জেলহাজতে আসামি সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন, মোট হত্যার সংখ্যা ১ হাজার ৫১২ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিএনপির নেতাকর্মী নিহত হওয়ার সংখ্যা ৭৮২ জন। মোট গুমের সংখ্যা ১ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে পরবর্তীকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৮১ জন এবং গুম হয়ে আছে এখন ৪২৩ জন। ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুরুতর জখম ও আহত হয়েছে ১০ হাজার ১২৬ জন। এসব সব আমাদের কাছে রেকর্ডেড। এর বাইরেও আছে যা রেকর্ডেড হয়নি। এটা থেকে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয়, সরকার সম্ভাব্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে, যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক করে রাখা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত করে রাখা এবং আমাদের সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে তাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার একটা প্রক্রিয়া তারা (সরকার) বের করতে পারে। : এরকম পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের জনগণ একটা নির্বাচন চায়। কেন চায়? তারা এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। সেই নির্বাচনে যেন বিরোধী দল অংশগ্রহণ করতে না পারে তার জন্য সবরকম অবস্থা তারা তৈরি করে রাখছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা যে ৭ দফা দিয়েছি তা মেনে নিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে। : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশে দেশে তারা (সরকার) সবাই বক্তৃতা করার সময় বলছেন যে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। এই পরিসংখ্যানে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয়, সরকার সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে। আমরা মনে করি এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, বিরোধী দলগুলোর জন্য নয় এটা সমগ্র জাতির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ, বিপজ্জনক। কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। আবার আগের নাটক শুরু হয়ে গেছে। মিরসরাইতে জঙ্গি আস্তানা। এই আলামত কিসের কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। কোনদিকে কোন উদ্দেশ্যে জাতিকে নিয়ে যেতে চায় এটা আমাদের কাছে বড় আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, গায়েবি মামলাগুলো হাস্যকর ব্যাপার। অদ্ভুত কান্ড সরকারের একবারও বোধোদয় হচ্ছে না যে, এটা করে তারা সবাইকে বিপদে ফেলছেন। এই কাজগুলোয় যারা জড়িত, যারা এই মামলাগুলো করছেন ভবিষ্যতে যদি এটাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা যায় তারা সবাই বিপদে পড়বেন। ইনক্লোডিং দ্য গভর্মেন্ট আইনতভাবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘সরকারের এসব ষড়যন্ত্রের’ মোকাবিলা করবে বলে জানান তিনি। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনকে থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য এভাবে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। উদ্দেশ্যে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটা একতরফা নির্বাচন করা। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই যে, এভাবে নির্বাচনের আগে সরকার নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে। যেটা বাংলাদেশকে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকান্ড করছে। গত ১০ বছরে নিজের অপকর্মের কারণেই তারা আতঙ্কিত হয়ে এসব কাজ করছে। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এভাবে কোনো ভিত্তি ছাড়া মামলা দায়ের করে সরকার দেশে ন্যায় সুবিচার ও সুবিচার বলতে যা বুঝায় তা একেবারেই নিঃশেষ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণকে আপনারা হেয়প্রতিপন্ন করছেন। আপনাদের যে দেশের মানুষের প্রতি কোনো আস্থা নাই যেটাই প্রমাণ করছেন এসব কর্মের মাধ্যমে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের আগে ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত যারা আমাদের নির্বাচন করবে তাদের সকলকে কারাগারে বন্দি করে রাখা। তারা চাচ্ছেন ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার। সরকারের দায়েরকৃত ‘গায়েবি’ মামলার বিরুদ্ধে রিট করা হবে বলে জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি যে, একটা মামলাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে, বিবেচনায় নিয়ে যেমন হাতিরঝিল মামলা যেকোনো একটা মামলাকে নিয়ে আমরা হাইকোর্টের রিট পিটিশন করার চিন্তা করছি। যে অফিসার বাদী হয়ে এই মামলা (গায়েবি) দায়ের করেছেন তার বিরুদ্ধে কেন সরকার বিভাগীয় পদক্ষেপ নেবে না, তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে না। এই আলোকে আমরা একটা রিট পিটিশন করার চিন্তা করছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।দিনকাল রিপোর্ট :