বিএনপির ৭ দফা তফসিলের পরই চূড়ান্ত আন্দোলন

0
126
Print Friendly, PDF & Email

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ সাত দফা দাবিতে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই। এ লক্ষ্যে দলটি ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আন্দোলনে যুক্তফ্রন্টসহ উদারপন্থী দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অংশ হিসেবে বিএনপির ‘সংস্কারপন্থী’ বলে পরিচিত নেতাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে শিগগিরই।

জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাস জুড়েই সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। আর আন্দোলনের গতি বাড়বে তফসিল ঘোষণার পরপরই। তবে দাবি মানার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চূড়ান্ত আন্দোলন করবে দলটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হওয়ার সময় থেকে। ওই সময় ঢাকায় গণজমায়েতের পাশাপাশি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও একই সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতিও দলটি রাখছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির কৌশল হলো, ন্যূনতম দাবি আদায় এবং সরকারকে চাপের মুখে রেখে নির্বাচনে অংশ নেওয়া।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে সাম্প্রতিককালে একাধিকবার বলা হয়েছে, ৩০ অক্টোবরের পর যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তফসিলের পরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে।

সূত্র মতে, সরকার ও ইসির সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা বিবেচনায় রেখেই কর্মকৌশল নির্ধারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটি প্রায় প্রতিদিন বৈঠক করছে।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আন্দোলন যথাসময়ে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সহিংস নয়, অহিংস পথে থেকেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনও করবে, নির্বাচনও করবে। তবে অবশ্যই ন্যায্য দাবি আদায়ে সঠিক সময়ে আন্দোলনের মাঠে দেখা যাবে বিএনপিকে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায় রাজপথে আমরা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা বিবেচনায় রেখেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পরও ‘শক্তি ও লোকবল ক্ষয়’ এড়াতে বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যায়নি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১০ অক্টোবর। রায়ে তারেক রহমানের সম্ভাব্য ‘সাজা’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা রয়েছে। কিন্তু ওই ইস্যুতে বিএনপি কঠোর কোনো কর্মসূচি দেবে না। দলটির নীতিনির্ধারক একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বিএনপি কিছুই করবে না ওই রায়ের পর। স্পর্শকাতর ওই ঘটনার রায়ে কর্মসূচি দেওয়া হলে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করে। তা ছাড়া ওই রায়ের পর তারেক রহমানের যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় আরো স্থায়িত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ন্যূনতম কর্মসূচি পালনও অনর্থক মনে করছে দলটি।

‘সংস্কারপন্থী’ বলে পরিচিত বিএনপির সাবেক এমপিদের দলের ফিরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে ‘সংস্কারপন্থীরা’ দলে আছে বলে ঘোষণা করা হবে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের।

যদিও সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত ১০৪ জনের মধ্যে বেশির ভাগ সাবেক সংসদ সদস্যকে এরই মধ্যে নানা প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির বাইরে ছিলেন ৩৮ জন সাবেক সংসদ সদস্য। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার আগে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। এরপর বাদবাকি নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে টেলিফোনে কথা বলেন তারেক রহমান। সাম্প্রতিককালে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকায় কেউ কেউ এলাকায় যেতে পারছে না। এ জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরামর্শ দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ওই ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি। ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনাসহ বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই এই বৈঠক। কারা কারা ওই বৈঠকে বসবে এরই মধ্যে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, বিকল্পধারার পক্ষে দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বিএনপির পক্ষে দলটির জ্যেষ্ঠ তিন নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

গত বুধবার যুক্তফ্রন্টের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা যায় সে বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মান্না এরই মধ্যে এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। যদিও বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী সংসদের আসনের ভিত্তিতে ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছেন। অর্থাৎ দেড় শ আসন দাবি করে তিনি বিএনপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঠেকাতে চাইছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের অন্য দুই দল জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য একমত নয়। ওই দুই দলের নেতারা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। যেমন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে যুক্তফ্রন্ট বা সমঝোতার মধ্য দিয়ে অন্য দলকে অন্তর্ভুক্ত করা। আবার ডেপুটি স্পিকার পদ ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি করে সমঝোতার মধ্য দিয়ে অন্য দলগুলোকে বসানোর বিকল্প প্রস্তাব নিয়েও ভাবছে উদারপন্থী দলগুলো। দুর্নীতি বন্ধ এবং প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধেও সুস্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির কাছে চাইছে ওই দলগুলো।

জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ

শেয়ার করুন