য় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনের জন্য দল রাজপথে নামবে নাকি নামবে না; আন্দোলন করলেও এর প্রকৃতি কেমন হবে- এসব নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে এতদিন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় প্রত্যেকেই আন্দোলন করে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা শিগগির এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন যে, দাবি আদায়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দিন থেকেই আন্দোলনে যাবে দল এবং আন্দোলন করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যেই আন্দোলন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করবে দল। এ ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার চাইছে, একটি ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন। আন্দোলন না করে নির্বাচনে গেলে সরকারি দল তাদের ইচ্ছানুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে যেনতেন একটি নির্বাচন করবে। আর আন্দোলন করলে সরকার চাপে থাকবে। দেশি-বিদেশিরাও সজাগ, সক্রিয় থাকবেন। সঙ্গত কারণেই, ২০১৪ সালের মতো যেনতেন একটি নির্বাচন সম্পন্ন করে ফের ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে না।
বিএনপির ধারণা, নির্বাচনে যাওয়ার ও প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সরকার তাদের খুব একটা সময় দেবে না। আওয়ামী লীগ চাইছে, বিএনপিকে অগোছালো অবস্থায় রেখে নির্বাচন করতে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপিতে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও চলছে তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে। চলতি অক্টোবরকে ঘিরেই চলছে বিএনপির আন্দোলন-ভাবনা। ১৫ অক্টোবরের পর থেকে বেড়ে যাবে দলীয় কর্মসূচি। আর এ মাসের শেষদিকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর পর আন্দোলনে নামবে বিএনপি। সে রকম একটি বার্তা শিগগিরই জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে দল।
এ ছাড়া বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। জামায়াত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সায় দিয়েছে। বিএনপিকে জামায়াত জানিয়েছে, তাদের পরস্পরের সম্পর্ক নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে যেন নেতিবাচক কোনো বার্তা না যায়, তা দুই দলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। আন্দোলনের জন্যও দল প্রস্তুত বলে বিএনপিকে ওই বৈঠকে জানিয়েছে জামায়াত। তাদের সব সাংগঠনিক ইউনিটের কর্মিসভাও সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যেই। বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিলেই মাঠে নামবে জামায়াতও।
দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আসন বণ্টন নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের সমঝোতা হয়েই আছে। তারেক রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে জামায়াতের খোলামেলা কথাবার্তা হচ্ছে। আসন বণ্টন নিয়ে দৃশ্যত ‘ঝামেলা’ থাকলেও বাস্তবে নেই।
এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির দাবি আদায়ের আন্দোলন নিয়ে বিদেশিদের নিয়মিত ব্রিফ করছে বিএনপি। গত সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। সেখানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা হয়। দলের একটি সূত্র বলছে, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে কমনওয়েলথের মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া জ্যানেট স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ বিএনপির কাছে তুলে ধরেন একটি চিঠির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠকের কথাও চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, সবাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যও উৎসাহিত করেছেন তিনি ওই চিঠিতে। কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, তিনি মনে করেন, প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র কার্যকর করবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে দেশে ফেরার পথে লন্ডন হয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে আন্দোলন ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয় নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন। দেশে ফিরে তারেক রহমানের বার্তা সিনিয়র নেতাদের জানান মির্জা ফখরুল।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারবিরোধী আন্দোলনের বার্তা দেন। তিনি বলেন, আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাব। দাবি না মানলে পর্যায়ক্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেগম জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, আন্দোলন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেখানে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার থাকে, সেখানে সে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের কাছ থেকেই আন্দোলনের চাপ আসে। এ সরকারের দীর্ঘদিনের দুঃশাসনে মানুষ বিক্ষুব্ধ। তারা আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুত; ডাক দিলেই মাঠে নামবেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, মাসখানেক ধরে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আন্দোলন ও নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করছেন। একাধিক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীর সঙ্গেও আলাপ করেছেন তিনি, তাদের মতামত নিয়েছেন। সবাই আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাইলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে মেনে নিলে আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না। এ জন্য সরকারকে খোলা মনে সংলাপে বসতে হবে।