খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন

0
236
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের যেকোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিতে তার আইনজীবীরা বলেছেন, কারাগারে বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। চিকিৎসা পাওয়া তার অধিকার। গত আট মাস ধরে তার চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে। এখন খালেদা জিয়া হুইল চেয়ারে চলেন, তার পরও বলা হচ্ছে কিছুই হয়নি।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর আংশিক শুনানি গ্রহণ করে আজ বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। তাদের সহায়তা করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আরো ছিলেন মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, মো: ফারুক হোসেন, রাগীব রউফ চৌধুরী, আনিছুর রহমান খান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, মির্জা আল মাহমুদ, সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রত্যেক রোগীর নিজস্ব চয়েজ থাকে। তার বাইরে কোনো ডাক্তার তাকে দেখতে পারে না। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাপারে একটি মেডিক্যাল বোর্ড বলেছিল তার কোনো সমস্যা নেই। পরে দেখা গেল তার অনেক সমস্যা। খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। চিকিৎসা পাওয়া তার অধিকার। একই সাথে তার পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা পাবেন এটাও তার অধিকার। আপনারা বলতে পারেন, তিনি সাজা প্রাপ্ত। কিন্তু কনভিক্ট হলেও চয়েজ অনুযায়ী চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে।

শুনানির একপর্যায়ে আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি পলিটিক্যাল ভিউ থেকে এটা নিয়ে এসেছেন। জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা তো মানুষ। এরপর আদালত বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) জেলে আছেন। জেল কোর্ডে কী আছে, ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া যাবে। জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা তা হলে কোথায় যাবো। আমরা আট মাস ধরে চিকিৎসার কথা বলছি। এখন খালেদা জিয়া হুইল চেয়ারে চলেন, তার পরও বলা হচ্ছে তার কিছুই হয়নি। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে, সে মামলায় উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। এরপর যেসব কেস আছে তাতে ৭০ বা ৮০ জনকে জামিন দিলেও খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি।

এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করার নির্দেশনাসহ তার চিকিৎসাসেবা-সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে বলা হয়, চিকিৎসা পাওয়া তার সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার। সেই অধিকার থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকার তাকে বারবার বঞ্চিত করছে। তবে হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ রিট আবেদনটি হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ১ অক্টোবর দিন ধার্য করে দেন।

কুমিল্লার নাশকতার মামলায় জামিন আবেদন : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এক মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন দায়ের করা হয়েছে। গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

জামিন আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালেদা জিয়া জামিন পান। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে রুল শুনানি করতে বলেন। এর পর হাইকোর্ট এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ কে এম সামছুল আলম। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবীরা।
আবেদনটি বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবর রহমানের বেঞ্চে শুনানি হবে বলে জানান ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ।
তিনি অভিযোগ করেন, বেগম খালেদা জিয়া গুলশান অফিসে যখন অবরুদ্ধ ছিলেন তখন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এই মামলা করা হয়। এই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যাতে জামিন আবেদন না করা যায় এবং তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখতে এত দিনেও মামলার আদেশের কপি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ মামলার সব আসামি কুমিল্লার আদালত থেকে জামিন পেলেও খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন তিনি যাতে কারাগারে থাকেন এবং জামিনে মুক্ত হয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারেন সে জন্য এসব কিছু করা হচ্ছে। কায়সার কামাল আরো জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লায় হত্যার অভিযোগে দায়ের করা আরো একটি মামলায় জামিন আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আজ কুমিল্লার আদালতে এটি শুনানির জন্য রয়েছে।

প্রসঙ্গত ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার হায়দারপুল এলাকায় পণ্যবাহী একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয়ার ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় শুনানি শুরু : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আবেদনে হাইকোর্টের জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শুনানি করেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী কায়সার কামাল মঙ্গলবার পাসওভার (সংক্ষিপ্ত সময় চেয়ে আবেদন) নেন। তারা সময় নিয়ে চলে যান। এরপর আমি এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু করি। আদালত এ শুনানি মুলতবি করেছেন। আজ বেলা ২টায় ফের শুনানি শুরু হবে।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি ২ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ১২ জুলাই এ আপিল শুনানি শুরু হয়।

শেয়ার করুন