গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএফইউজে ও ডিইউজের যৌথ উদ্যোগে গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত প্রতীক অনশনে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী -সংগ্রাম
# ৬ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, গণবিরোধী, সংবিধান পরিপন্থী এবং সাংবাদিক কর্তৃক ধীকৃত এই আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত সংবাদকর্মীদের আন্দোলন চলতেই থাকবে। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) প্রতীকী অনশনে তারা এই ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের প্রতীকী অনশনে সংহতি জানাতে আসা বিভিন্ন পেশার মানুষেরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী অনশনে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।
আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে এসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে এখন পুলিশী শাসন চলছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি এত খারাপ যে একজন দারোগা ইচ্ছে করলেই যে কারো কোমরে রশি বাঁধতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীকে ভারত এবং স্পেনের গোয়েন্দা সংস্থা বিভ্রান্ত করছে উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা সর্বত্র ভূত দেখছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক বলেন, কথা বলা আমাদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু সরকার যখন মনে করে মানুষ সত্যটা জেনে ফেললে তাদের সমস্যা হবে তখন এরকম আইন তৈরি করে।
তিনি বলেন, মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে। সাংবাদিকরা যদি ভুল করে বা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে তাহলে তাদের জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে যা করা হচ্ছে মেনে নেওয়া যায় না।
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন, জনধীকৃত এবং সংবিধান পরিপন্থী আইন। এই দেশের মানুষ এই আইন মানে না। এই আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে স্বাধীনভাবে কথা বলার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল আইন সংবিধানের সেই অনুচ্ছেদের বিপরীত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপস্থী। এই আইন থাকলে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা সম্ভব না। কেবল সরকারের হ্যান্ডআউট ছাপার জন্য সংবাদপত্র প্রকাশ হয় না বলেও মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা।
রুহুল আমিন গাজী আরও বলেন, ছাত্রলীগের হেলমেড বাহিনী কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের আক্রমণ করলো। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করা হলো না। আমাদের ঘাড়ে ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছে। ডিজিটাল আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দেশে বাকশাল কায়েম করতে চায়।
তিনি দেশবাসীকে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষ জেগে উঠলে কালো আইন দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। এর আগেও সমস্ত পত্রিকা বন্ধ করে ১৬ জুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘৃণিত আইন দিয়ে সাংবাদিকদের দমন করা যাবে না। এসময় তিনি ৬ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংহতি জানাতে এসে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসাথে যায় না। এরপরও বারবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই কাজটি করেছে। তিনি বলেন, এই দেশে কালো আইন করে কেউ টিকতে পারেনি।
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজীজ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমস্যা স্বৈরাচার বুঝবে না। এই আইন গণতন্ত্রের বিপক্ষের ব্যক্তির বোঝার কথা না। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্য মানহানির পর্যায়ে পড়ে মন্তব্য করে এমএ আজীজ বলেন, এই আইনের মাধ্যমে দেশকে উপনিবেশ আমলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, তিনমন্ত্রী সম্পাদক পরিষদ এবং দুটি সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার নাটক করেছে। সারা দুনিয়া এই আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, এই আইন বাতিল করতে হবে। নইলে প্রয়োজনে সাংবাদিকরা আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেশের সম্পাদক পরিষদসহ যারা এই আইনের বিরোধিতা করছেন তারা বাঙ্গালি নন এবং তারা জামায়াত সমর্থক এবং রাজাকার বলে যে মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা জানান। এখন সম্পাদকদের উচিত নিজেদের বাঙ্গালি প্রমাণ করা। সরকার এই আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমবিহীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, আমরা যে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছি এখান থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। বিজয় অর্জন করেই ঘরে ফিরবো।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহমদ মতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তার ছেলে ধরা খেয়ে গেছেন। তাদের জামিন নাই। মুক্তিযোদ্ধারা মরে যায়নি। এই সরকারের সময়ে ৩৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে। অনশনে ছড়া এবং কবিতা পাঠ করে উৎসাহিত করেন বিশিষ্ট ছড়াকার আবু সালেহ এবং রফিক হাসান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, দিগন্ত টেলিভিশনের উপনির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএফইউজের সহসভাপতি নূরুল আমীন রোকন, মোদাব্বের হোসেন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাবেক সভাপতি একেএম মহসিন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কাফি কামাল, নাসির উদ্দিন শোয়েব, কামরুজ্জামান কাজল প্রমুখ।